বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুখবর, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আর কোনো সিন্ডিকেট থাকছে না। অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ অব বাংলাদেশের (বায়রা) সব সদস্য এবার নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে শুরু হতে যাওয়া শ্রমিক প্রেরণে সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন।
এ দিকে আজ বুধবার সকাল ১০টায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয়ের পলিসি বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি এমডিএম বেট্টি হাসানের নেতৃত্বে আরো উপস্থিত থাকবেন মালয়েশিয়ার পেনিনস্যুলার ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক জেনারেল (অপারেশন) আসরি এ বি রহমান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফরেন ওয়ার্কার্স ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জমরি মত জিন, হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয়ের লিগ্যাল ডিভিশনের লিগ্যাল অ্যাডভাইজার মো: নওয়ারি ইসমাইল, হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রণালয়ের পলিসি ডিভিশনের সহকারী সচিব শাহাবুদ্দিন আবু বকর ও মালয়েশিয়ার পেনিনস্যুলার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নওরলিয়া আনাক জওয়র উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের শ্রমবাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে সিন্ডিকেটমুক্ত শ্রমবাজার, অভিবাসনব্যয় কত টাকা হবে তা নির্ধারণ, মেডিক্যালপদ্ধতি কেমন হবে, ট্রেনিং সেন্টারগুলোর মান এবং আগের এমওইউতে উল্লেখ থাকা জি টু জি প্লাস সিস্টেমের পরিবর্তে সব রিক্রুটি এজেন্সিই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে এমন সিদ্ধান্ত বৈঠকে হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। অপর দিকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবের নেতৃত্বে মালয়েশিয়া প্রতিনিধিদলের বৈঠকে অংশ নিতে দুই দিন আগে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মুহ: শহীদুল ইসলাম ও কাউন্সেলর (শ্রম) সায়েদুল ইসলাম মুকুল ঢাকায় এসেছেন বলে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে জানান।
এ দিকে জিটুজি প্লাসের এসপিপিএ (ঝরংঃবস চবৎসড়যড়হধহ চবশবৎলধ অংরহম) পদ্ধতি মাহাথির মোহাম্মদ সরকার গত ১ সেপ্টেম্বর বাতিল করে দেন। এরপর বাংলাদেশের ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। মালয়েশিয়া সরকার ওই সময় ঘোষণা দিযেছে, নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী যাওয়া শুরু না হওয়া পর্যন্ত ‘ম্যানুয়েল’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাবে। তবে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়াগামী প্রায় ৭৩ হাজার কর্মীর সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলেও তারা যেতে পারছিলেন না।
পরে মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশের অসহায় মানুষের জমিজমা বিক্রির টাকা রিক্রুটিং এজেন্সির হাতে তুলে দেয়ার কথা মানবিক বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দেশটিতে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করার কথা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়। এই সুযোগে অপেক্ষমাণ প্রতি কর্মীর নামে অলিখিত যে ৫ হাজার মালয় রিংগিট (১ লাখ টাকা) ১০ সিন্ডিকেটের নামে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আদায় করছিলেন, সেই টাকা এখনো আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিন্ডিকেটের যে ১০ মালিক সিনারফাক্সের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করছে তাদের কর্মীর ফাইট দিতে টালবাহানা করা হচ্ছে। যার কারণে এখনো প্রায় ২০-৩০ হাজার কর্মী মালয়েশিয়া যেতে পারছেন না।
জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসার সাথে জড়িত মালিকরা বলছেন, যারা এখনো দাতো শ্রী আমিন নুরের কোম্পানি সিনারফাক্সকে প্রশ্রয় দেয়ার চেষ্টা করছে তাদের দ্রুত চিহ্নিহ্নত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুবা দেশ থেকে এসব কর্মী পাঠানোর নামে আরো ৩ শ’ কোটি টাকা পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে ভুক্তভোগী জনশক্তি রফতানিকারকেরা মনে করছেন। গতকাল মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত সিনারফাক্স কোম্পানি অংশীদার আমিন নুরের সাথে যোগাযোগ করে এর সত্যতা জানার চেষ্টা করা হলেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণে সিন্ডিকেটভুক্ত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির একজন গত রাতে নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, দাতো আমিনের সিনারফাক্স কোম্পানিতে যে অনলাইন সিস্টেমে এত দিন লোক যেত সেটি মাহাথির মোহাম্মদ সরকার এসেই বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও তিনি জনপ্রতি কর্মী প্রেরণের আগে ৫ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিট সার্ভিস চার্জ আদায় করছেন। তার মতে ৭৩ হাজার কর্মীর মধ্যে ইতোমধ্যে ৪০-৫০ হাজার কর্মীর ফাইট সম্পন্ন হয়েছে। এখনো ২০-৩০ হাজার কর্মী যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। কিন্তু আমরা আর তাকে এক লাখ টাকা করে দেবো না।
তবে তিনি যদি সিনারফাক্স কোম্পানির নামে সার্ভিস চার্জ দাবি করেন, তাহলে আমরা তার কোম্পানির সিস্টেম কস্টের জন্য ৫০০ অথবা সর্বোচ্চ ১০০০ রিংগিট দিতে রাজি আছি। নতুবা অন্য পদ্ধতিতে আমরা কর্মী পাঠাব। আমিন নুরের কোম্পানির মাধ্যমে বাকি কর্মীদের প্রেরণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে কোনো সুপারিশ সংবলিত চিঠি দেয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা আমার জানা নেই। তবে এমন সুপারিশ হাইকমিশন থেকে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
গতকাল মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ: শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
সিন্ডিকেটের তালিকাভুক্ত অপর এক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক নাম না জানিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, নেপালে যে সুন্দর সিস্টেমে লোক নেয়ার চুক্তি করেছে মালয়েশিয়া এভাবে অবশ্য বাংলাদেশেরটা করছে না। তবে ‘বায়ো রিক্রুটমেন্ট’ পদ্ধতিতেই লোক নেবে তারা। একই সাথে এমওইউ চুক্তিতে (ওপেন ফর অল) সবার জন্য শ্রমবাজার উন্মুুক্ত হওয়ার বিষয়টি আজকের বৈঠকের পর ঘোষণা আসতে পারে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আপাতত লোক যেতে পারবে এমন সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে আজকের বৈঠক থেকে।