প্রবাস ডেস্ক : সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে ২০১৫ সালে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল শামিমা। জঙ্গি সংগঠন আইএসে যোগ দেওয়ার সময় তার বয়স ছিল ১৬। জন্মসূত্রে বাংলাদেশি হলেও ইংল্যান্ডেই থাকতো শামিমা।
সিরিয়ায় যাওয়ার পর এর মধ্যে সে অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে দু’বার। কিন্তু মারা গিয়েছে দু’টি বাচ্চাই। এ বার ফের অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় নিজের তৃতীয় সন্তানকে বাঁচাতে যে কোনও মূল্যে দেশে ফেরার আর্জি জানাল সে।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে নিজের আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে ইংল্যান্ড থেকে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় পালিয়েছিল সে। মৌলবাদী ইসলামিক সন্ত্রাসে উদ্বুব্ধ হয়েই কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন আইএসের যোগ দিয়েছিল সে। সিরিয়ায় যাওয়ার পর গত চার বছরে এই নিয়ে তিন বার অন্তঃসত্ত্বা হল সে।
কিন্তু আগের দু’টি সন্তানই অপুষ্টির শিকার হয়ে মারা যায়। এ বার আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না শামিমা। সিরিয়ার একটি উদ্বাস্তু শিবির থেকে সে জানাল, ‘বাড়ি ফেরার জন্য আমি সব কিছু করতে পারি। আমি আমার সন্তানের সঙ্গে শান্তিতে কাটাতে চাই।’
বাড়ি থেকে বেরনোর নাম করে আরেক বাংলাদেশি বন্ধু কাদিজা সুলতানা এবং আমিরার সঙ্গে ইংলন্ডের বাড়ি থেকে পালিয়েছিল শামিমা। চমকে উঠেছিল গোটা ব্রিটেন। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, ইন্টারনেটের দৌলতে সন্ত্রাসের হাত এখন পৌঁছে গিয়েছে বাড়ির ড্রইংরুমে।
সিরিয়ায় পৌঁছনোর কিছু দিনের মধ্যেই শক্ত আইএস ঘাঁটি রাক্কায় শত্রুপক্ষের গোলায় মারা যায় বন্ধু সুলতানা। অন্য দিকে শামিমা আইএসকে জানিয়েছিল,‘ ইংরেজি বলতে পারে, এই রকম ইসলামি যোদ্ধাকে আমি বিয়ে করতে চাই।’
এর পরই তার ঠাঁই হয় মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট শিবিরে। দশ দিনের মধ্যেই সেই আবেদনপত্র দেখে নেদারল্যান্ডস থেকে সিরিয়ায় যাওয়া এক জঙ্গির সঙ্গে তার বিয়ে দেয় আইএস।
গত সপ্তাহেই সিরিয়ার বাঘুজে আইএসের শেষ শক্ত ঘাঁটির পতন হওয়ায় আত্মসমর্পণ করে এই দম্পতি। আপাতত তাদের ঠাঁই দেওয়া হয়েছে একটি উদ্বাস্তু শিবিরে। এর পরই উদ্বাস্তু শিবির থেকে দেশে ফেরার কথা জানাল ১৯ বছরের শামিমা। এখন সে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
শামিমার বক্তব্য, ‘আমি ইংল্যান্ডে ফিরতে চাই। ওখানে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো অনেক ভাল। ইংল্যান্ডে গেলে আমার সন্তান ভাল থাকবে।’
সন্তানের জন্য ইংল্যান্ডে ফিরতে চাইলেও নিজের জঙ্গি কার্যকলাপের জন্য সে যে অনুতপ্ত, এরকমটা একেবারেই নয়। তার কথায়, ‘চার বছর আগে বাড়ি থেকে পালিয়ে আমি কোনও ভুল করিনি। আমি এখন মানসিক ভাবে অনেক শক্তপোক্ত। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথম বারের জন্য শত্রুর কাটা মুণ্ড দেখেও খুব একটা অবাক হইনি।’ আনন্দবাজার