আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এক মাস বয়সী মেয়েকে হলুদ কাঁথা দিয়ে মুড়ে বসেছিলেন তার মা। কিন্তু মেয়ের নামটি হঠাৎ করে মনে করতে পারছিলেন না। চোখেমুখে বিভ্রান্তি আর বিপর্যয়ের ছাপ। তার কারণ তিনি ধীরে ধীরে বর্ণনা করলেন।
তিনি বলছিলেন, "যাবার পর এক সপ্তাহ ভালো ছিল। এর পরে দিয়া তারা নির্যাতন করছে। তারা আমাকে বলছে আমি এই ধরনের কাজকাম করবো। আমি কইছি - 'না, আমি আপনার বাসায় আসছি কাজ করতে। আমি এইগুলো করতে আসি নাই।"
কিন্তু তাতে কপালে জুটেছে নির্যাতন। তার বর্ণনা দিতে গিয়ে এই নারী বলছিলেন, "না দিলে তারা আমাকে মারত, মুখ বাইন্ধা রাখতো, হাত বাইন্ধা রাখতো। ছেলেও আসতো, ছেলের বাবাও আসতো।"
গত বছর মে মাসের দিকে সৌদি আরবের রিয়াদে দ্বিতীয় দফায় গৃহশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ যে অভিজ্ঞতা হয়েছিলো এই নারীর, তার খানিক বর্ণনা এটি। তার ভাষায় এই নির্যাতনেরই ফল হল তার কোলের কন্যা শিশুটি।
এক মাসের মাথায় রিয়াদের সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে দূতাবাসে চলে আসেন তিনি। এরপর সেখানে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে কাটে চার মাসের মতো। অবশেষে দেশে ফিরে আসেন সরকার ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সহায়তায়। কিন্তু পুরো বিষয়টি তিনি রিয়াদে কর্তৃপক্ষের কাছে চেপে গিয়েছিলেন।
তার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, "আমার এই সমস্যা আমি সরকারের কাছে বলি নাই। কেন বলি নাই জানেন? কারণ বললে ওইখানে আমার সমস্যা হবে। ওইখানেতো পুলিশ থাকে। এই বাচ্চাটা যতক্ষণ না হবে - এই পর্যন্ত আমাকে ওরা বাংলাদেশে আসতে দেবে না। বাচ্চা তারা রাইখা দেয়।"
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কঠোর আইনের কারণে ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েও উল্টো শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় কিনা - এমন আশংকায় অনেকেই এসব ঘটনা চেপে যান বলে জানালেন তিনি।
ফেরত আসা আর এক নারী শ্রমিকের গল্প
সঙ্গত কারণেই আমরা এই নারীদের পরিচয় গোপন করছি। তাদের সাথে কথা হচ্ছিলো ঢাকায় আহসানিয়া মিশনের দু:স্থ নারী ও পরিত্যক্ত শিশু কেন্দ্রে।
সেখানে কথা হচ্ছিলো আরও এক নারীর সাথে যিনি কাতারের দোহায় নির্যাতনের মুখে এক বাংলাদেশি গাড়ি চালকের কাছে পালাতে সাহায্য চেয়ে উল্টো তার কাছেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন।
এরপরও তিনি কিভাবে পালালেন, তাই বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি। বলছিলেন, "একজনে বলল, পুলিশে ফোন দিলে সাহায্য পাওয়া যাবে। পুলিশকে কল দিলে ওরা ঠিকানা চাইলো। আমি ঠিকানা-ফিকানা কিছু জানিনা। পরে কোন রকমে গেটের বাইরে গিয়া বাড়ির সামনে ঠিকানার ছবি তুলে মোবাইলে পাঠাইছি। পরদিন সকাল বেলা পুলিশ আইসা আমারে নিয়া গেছে।"
দেশে ফিরে জেনেছেন, তিনি গর্ভবতী। পরিবারকে সেকথা বলার সাহস তার হয়নি। "ঐখানে শরীর খারাপ লাগতো। ওরা আল্ট্রাসনো কইরা বলছিল, - 'হামিল'। আমি বুঝি নাই। হামিল মানে প্রেগন্যান্ট। পরে দেশে আইসা আবার আল্ট্রাসাউন্ড কইরা দেখি আমি প্রেগন্যান্ট।"
"ফ্যামিলিতো মেনে নেবেন না। যদি বিয়ে হইতো, আমার স্বামী থাকতো তাইলে হয়ত ফ্যামিলি মেনে নিতো। এজন্য বলিনি আবার ভয়েও বলিনি। দেশের বাড়িতে সবার তো একটা মান সম্মান আছে। আমার মা-বাপের আমিই প্রথম মেয়ে। দেখা যাবে যে তারা সবার কাছে কালারিং হয়ে যাবে। যার কারণে এইখানে আসছি।"
এখন তিনি আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে সন্তান জন্মদানের অপেক্ষায়। কিন্তু পরিবারকে বলেছেন ঢাকায় ব্রাকে চাকুরী করেন তিনি। এরপরে তার ভাগ্য কি আছে সেটি ভাবার মতো মানসিক অবস্থায় এখন তিনি নেই।