প্রবাস ডেস্ক : পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার ঠিক ১২ দিনের মাথায় পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিতে পাল্টা প্রত্যাঘাত করলো ভারতীয় সেনা। এই ঘটনায় উচ্ছ্বসিত ভারতে অবস্থানরত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে অন্য দেশের নাগরিকরাও।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে লেখক তসলিমা নাসরিন টুইট করে জানিয়েছেন, পাকিস্তান তো বলেছিল জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এবার তো তাহলে তাদের ভারতকে ধন্যবাদ জানানো উচিত কারণ বালাকোটে জঙ্গিঘাটি গুড়িয়ে দিয়েছে বলে। জঙ্গিরা কোনও দেশের পক্ষেই ভাল নয়।
এর আগে পরশু তসলিমা তার নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন পাক-ভারত উত্তেজনা ইস্যুতে। সেখানে তিনি শান্তির কথা বলেন। তসলিমা নাসরিনের সেই স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
তসলিমা নাসরিন : ভারতে এখন দেশপ্রেমের হিসেব নিকেষ চলছে। শুনেছি যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চায় না, তাদের দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে। আমি এইসব ঝামেলা থেকে বেঁচেছি। আমাকে আমার দেশের প্রতি প্রেম দেখানোর কোনও দায় নেই।
যে দেশ আমার বিরুদ্ধে ২৪ বছর যাবৎ অন্যায় করছে, সে দেশকে আমি, শত্রুও বলবে, গালাগালি করার অধিকার রাখি। আমি কিন্তু মনে করি এই অন্যায়ের যুগে যারা স্টেটাস কুও মানে, তাদেরই দেশপ্রেমটা সন্দেহজনক।
দেশের সমালোচনা মানুষ তো তখনই করে, যখন দেশটির ভালো চায়। দেশ ব্যাপারটা তো বিশাল, কেউ যদি নিন্দেও করে, তাতে কি সত্যিই দেশের কিছু আসে যায়? দেশের জন্য প্রেমটা থাকতেই হবে কেন?
আমি যদি মানুষ হিসেবে সৎ হই, কাউকে না ঠকাই, কারো ক্ষতি না করি, দূর্নীতি না করি, প্রতারণা না করি, মিথ্যে না বলি,সমতার সমাজ যদি চাই, দরিদ্র আর দুর্বলকে সাহায্য করি, তাহলেই কি নাগরিক হিসেবে আমি শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য নই?
দেশের জন্য প্রেমটা ঠিক কী জিনিস, আমি বুঝি না। মানুষ নিয়েই তো দেশ, মানুষ নিয়েই তো বিরাট এই পৃথিবী। মানুষের জন্য আমার মায়া আছে, মমতা আছে। আইসল্যাণ্ডের একটি নিরীহ মানুষের জন্য আমার যে মায়া, আমার দেশের একটি নিরীহ মানুষের জন্যও আমার ঠিক তেমনই মায়া। আমি এই মায়াকে বেশি বা কম করতে পারি না, কেউ কাছে থাকে বা কেউ দূরে থাকে -- এই যুক্তিতে।
আমি যুদ্ধ দেখা মানুষ। আমি পৃথিবীর কোথাও আর যুদ্ধ হোক চাই না। আর মৃত্যু দেখতে চাই না। বিচ্ছেদ আর বিভেদগুলো ঘুচে যাক। পৃথিবীর সব মানুষ মিলে মিশে বাঁচুক। সুখে আনন্দে বাঁচুক। আমরা মংগলগ্রহে চলে যেতে পারছি, কিন্তু আজও পৃথিবীর ভেতরের দারিদ্র, বর্বরতা, অসভ্যতা দূর করতে পারছি না! অবাক লাগে।