প্রবাস ডেস্ক : সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডে 'জয় শ্রীরাম' না বলায় পিটিয়ে মারা হয় চোর সন্দেহে ধৃত এক মুসলিম যুবককে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় বইছে দেশজুড়ে। এবার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করলেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
ফেসবুকে তিনি লেখেন, “২৪ বছর বয়সী তাবরেজ আনসারিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিটিয়েছে তারা, যারা তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ আর ‘জয় হনুমান’ বলতে বাধ্য করেছে। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালেই মরতে হলো তাবরেজকে। মোটর সাইকেল চুরি করতে চেয়েছিল তাবরেজ। বেটা চোর। কিন্তু চোরকে কি পিটিয়ে মেরে ফেলতে হয়? চোরকে কেনই বা ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলা হবে?
রাগটা কি তবে যত না সে চোর বলে, তার চেয়ে বেশি মুসলমান বলে? ভারত নিয়ে আমি কতই না গর্ব করি যে এই দেশটি এর সংখ্যালঘুদের বড় ভালো রাখে। বাংলাদেশ আর পাকিস্তান তো তাদের সংখ্যালঘুদের নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। কিন্তু, কদিন পরপরই এই ভারতবর্ষে ঘটে যাচ্ছে সংখ্যালঘুকে পিটিয়ে মারার কাহিনি, জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলার কাহিনি।
আমি জানি না কী মনে করে এরা মুসলমানদের মুখ থেকে ‘জয় শ্রীরাম’ শুনতে চায়। রামের যারা ভক্ত, তারা তো ‘জয় শ্রীরাম’ বলছেই, তাদের তো কেউ বাধা দিচ্ছে না। ‘জয় শ্রীরাম’ বললে কি মুসলমানরা হিন্দু হয়ে যায় বা রামকে ঈশ্বর বলে মানতে শুরু করে? তা তো নয়, বরং এসবের জন্য হিন্দুদের বদনাম হয়।
পিটিয়ে কি ১৭ কোটি মুসলমানকে মেরে ফেলা যাবে, সে তো যাবে না। শান্তির সম্পর্ক গড়ে তোলা ছাড়া আপাতত আর কোনও উপায় নেই। অন্যের প্রতি তীব্র ঘৃণা নিয়ে দিনের পর দিন বাস করাও দুর্বিষহ। প্রাণের আরাম হয় না। সে কারণে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্ধুত্বই একমাত্র সমাধান। ভারত মহান। ভারতকে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মতো হওয়া মানায় না।”
পুণেতে দিনমজুরের কাজ করতেন ২৪ বছরের তবরেজ৷ কিছুদিন ঈদের ছুটি কাটাতে ঝাড়খণ্ডের গ্রামে এসেছিলেন৷ পরিজনেরা তার বিয়েরও বন্দোবস্ত করেছিল। গত ১৮ জুন দু’জনের সঙ্গে জামশেদপুরে যাচ্ছিলেন তবরেজ৷
অভিযোগ, ঝাড়খণ্ডের খরসোঁয়া এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় মোটর সাইকেল চুরি অভিযোগে চোর সন্দেহে বেশ কয়েকজন তাকে ঘিরে ধরে৷ সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায় তার দুই সঙ্গী। এরপরই উন্মত্ত জনতার রোষের বলি হন তবরেজ৷