প্রবাস ডেস্ক : এবার নুসরাতের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারির তীব্র প্রতিবাদ জানালেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের কড়া সমালোচনা করে ফেসবুকে এক পোস্ট করেন তিনি।
মুসলিম হয়েও একজন অমুসলিমকে বিয়ে করা এবং সিঁদুর পরে সংসদে শপথবাক্য পাঠ ও বক্তব্য রাখা, জয় হিন্দ ও বন্দেমাতরম স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী নুসরাত জাহানের ওপর চটেছেন ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতারা। নুসরতের বিরুদ্ধে উত্তর ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে জারি করা হয়েছে ফতোয়া। এই বিষয়ে নুসরাত নিজেই সর্বপ্রথম ফেসবুকে একটি পোস্ট করে প্রতিবাদ জানান। এরপর ভারতের শাসকদল বিজেপির একাধিক নারী এমপিও তৃণমূল কংগ্রেসের নবনির্বাচিত সাংসদ নুসরাত জাহানের পাশে দাঁড়িয়েছেন।
এবার মুখ খুললেন ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশের লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘নুসরাত জাহান, একজন মুসলিম, তিনি বিয়ে করেছেন অমুসলিম নিখিল জৈনকে। হিন্দু প্রথা মেনে সাত পাকে বাঁধা পড়েছেন। দুজনের কেউই তো ধর্মান্তরিত হননি! কিন্তু দেওবন্দের মৌলবীরা এতে বেজায় চটলেন। তারা চান অমুসলিমরা বিয়ের আগে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে যাক। চুলোয় যাক। দু’জন ভিনধর্মে বিশ্বাসী মানুষ বিয়ে করলেন। বেশ করেছেন।’
নিখিল জৈনকে বিয়ে করার পর তাঁর নতুন নাম হয়েছে নুসরাত জাহান রুহি জৈন। হিন্দু নারীর মতোই তিনি তাঁর সিঁথি রাঙিয়েছেন সিঁদুরে। হাতে চূড়া, মেহেন্দি, গলায় মঙ্গলসূত্র, গায়ে আচল জড়িয়ে শাড়ি পরিহিতা, এভাবেই নববধূর বেশে গত ২৫ জুন ভারতের জাতীয় সংসদ লোকসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন বসিরহাট কেন্দ্রের নবনির্বাচিত তৃণমূল সাংসদ নুসরাত। নববধূর বেশে সংসদে হাজির হওয়ায় নুসরাতের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মৌলবাদের ধ্বজাধারীরা। কেন তিনি হিন্দু রীতি মেনে বিয়ে করেছেন নিখিল জৈনকে।
শনিবারই সেই ঘটনার প্রতিবাদ করে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, বিজেপি নেত্রী ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরি এবং হিন্দুত্ববাদী নেত্রী সাধ্বী প্রাচীর মতো একাধিক ব্যক্তিত্বরা। এবার তৃণমূলের সাংসদ নুসরাতের পাশে দাঁড়ালেন বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
অন্যদিকে, সতীর্থ নুসরাতকে সমর্থন জানিয়েছেন যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তীও। প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় নুসরাতের পোস্ট শেয়ার করে প্রতিবাদ জানান। তারপর এক বক্তব্য রাখতেও গিয়েও নুসরাতের প্রসঙ্গ উত্থাপন হলে রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন মিমি।
তিনি বলেন, ‘প্রথমদিন থেকেই তো আমরা খবরের শিরোনামে। তা সংসদে জিনস পরা নিয়ে হোক কিংবা অন্য পোশাক। এখন নতুন আপত্তি উঠেছে সিঁদুর পরা নিয়ে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে সে সিঁদুর পরবে কি পরবে না, এটা তো তাঁর একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। যাঁরা সমালোচনা করছেন একটাই বলব, নিজের মা-বোনদের যেরকম সম্মান দেন, সেইটুকু সম্মান অন্য নারীদেরও দিন দয়া করে। হাজার হোক, আমরা তো দেশের প্রতিনিধিত্বই করছি। কাজেই সেই সম্মানটুকু তো আমাদেরও প্রাপ্য।’ সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন