তসলিমা নাসরিন : ইসলামের জন্মভূমিতে মেয়েরা সদ্য একখানা অধিকার পেয়েছে। অধিকারটি হলো, পুরুষ-অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তারা ভ্রমণ করতে পারবে। পৃথিবীর আর কোনও মুসলিম দেশে সৌদি আরবের মতো ভয়ংকর নারী বিদ্বেষী আইন নেই।
পয়গম্বরের জন্ম যে দেশে, সে দেশে মেয়েদের হাল এত খারাপ কেন! উনি এবং উনার ধর্ম নাকি মেয়েদের প্রচণ্ড মর্যাদা দিয়েছেন! কই! সপ্তম শতাব্দিতে যৌনদাসির ভূমিকায় যে রোল প্লে করতে মেয়েরা বাধ্য হয়েছিল, আজও এই একবিংশ শতাব্দিতে সেই একই রোল প্লে চলছে।
গরিব দেশ থেকে গিয়ে যে গরিব মেয়েরা সৌদি আরবের বাসাবাড়িতে কাজ করে, অধিকাংশই ধর্ষিতা হয়ে ফেরত আসে। ১৪০০ বছর পর সৌদি কর্তৃপক্ষ মেয়েদের মৌলিক অধিকার অতি সামান্যই ফেরত দেওয়ার কথা ভেবেছেন, তাও সভ্য দেশগুলোর চাপে।
এই সময় পয়গম্বর বেঁচে থাকলে কী করতেন জানিনা। উনি কি তার উন্মাদ উম্মতদের শাসাতেন নাকি আরও ঢোলের বাড়ি দিতেন কে জানে। তবে বিশ্ব জুড়ে মুসলমানের বিপুল সংখ্যা দেখে নিশ্চয়ই তিনি মুহুর্মুহু মুর্চ্ছা যেতেন।
মক্কার মতো ছোট একটি শহরের মানুষকে ধর্মান্তরিত করতে কত অস্ত্র সস্ত্র, কত ছল কৌশল, কত অতর্কিতে হামলা, কত লুণ্ঠন, কত যুদ্ধ, কত রাজনীতির আশ্রয় নিতে হয়েছিল তাকে। মারও তো কম খাননি। ইসলাম আসার আগে মেয়েরা তো আরবদেশে দিব্যি বাণিজ্য করতো, সম্পত্তির মালিক হতো, নিজে পছন্দ করে বিয়ে করতো, এমনকী কম বয়সী পুরুষদের বিয়ে করতো।
পয়গম্বরের প্রথম স্ত্রী খাদিজাই তো তার প্রমাণ। উচ্চবিত্ত মেয়েরা সম্পত্তির অধিকার পেলেও, সম্ভবত ছোট ছোট দরিদ্র উপজাতির মেয়েদের সেই অধিকার ছিল না। ধনী দরিদ্র সকলে কিন্তু দেবী পুজোটা ঠিকই করতো। আল লাত, আল উজ্জা, আর মানাত দেবীর পুজো করতো। মেয়েদের সেকালে এদিক ওদিক যেতে হলে পুরুষের অনুমতি নিতে হতো না। পয়গম্বরকেই তো বরং খাদিজার অনুমতি নিয়ে ক্যারাভান চালিয়ে দূরের শহরে বাণিজ্য করতে যেতে হতো।
ইসলামের জন্মভূমিতে সেক্সশপ আসছে। ডিসকো খোলা হচ্ছে। মেয়েরা নিতম্ব দুলিয়ে নাচবে, আর পুরুষেরা টাকা ছুঁড়ে ছুঁড়ে দেবে। তাই তো করে এরা। যতই খ্যামটা নাচ নাচুক, বোরখা না-পরার অধিকার কিন্তু কোনও মেয়েই পাবে না। মেয়েরা আদৌ তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা ওই ভূমিতে পাবে বলে আমার মনে হয় না। ধর্ম বেচে ওরা যতদিন খাবে, ততদিন নারীর অধিকার নৈব নৈব চ।
ঘোড়েল মোল্লা মুন্সিদের দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় ওদের ভেতরে লুকিয়ে আছে এক এক জন পয়গম্বর। ঘুমিয়ে আছে মুসলিমের পিতা সব মুসলিমেরই অন্তরে। সব না হলেও অধিকাংশ মুসলিমের অন্তরে তো অবশ্যই। তা না হলে মেয়েরা আজও সমানাধিকার পায় না কেন?
সূত্র : নির্বাসিত লেখিকার ফেসবুক পোস্ট থেকে...