ডিএনএ পরীক্ষা করাতে চান নিজেকে বাংলাদেশের লেখিকা এবং ভারতের অভিনেতা ও বিজেপি নেতা জর্জ বেকারের মেয়ে দাবি করা অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের রাস্তায় ব্যানার হাতে ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানাতে দেখা গেছে তাকে। ফেসবুকেও তিনি এ বিষয়ে দাবি জানিয়েছেন। মামলা করেছেন আদালতেও। ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়ছে এ-সংক্রান্ত সংবাদ। দেশ রূপান্তর
পশ্চিমবঙ্গের ভাতারের নারায়ণপুরের তরুণী অঙ্কিতা ভট্টাচার্য ২০১৮ সাল থেকে দাবি করে আসছেন, তার বাবা বিশিষ্ট অভিনেতা ও বিজেপি নেতা জর্জ বেকার এবং মা তসলিমা নাসরিন।
অঙ্কিতার বক্তব্য অনুযায়ী জানা যায়, জন্মের পর থেকেই তার বাবা এবং মা কলকাতার বেহালার সরশুনার বাসিন্দা গৌরী ভট্টাচার্যের কাছে তাকে রেখে আসেন। তারপর মাঝে মাঝে তারা তাকে দেখে আসলেও বড় হওয়ার পর আর তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি।
২০১৭ সালে অঙ্কিতা ইন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেন। অঙ্কিতা এবং তার স্বামীর দাবি, গৌরী ভট্টাচার্য নামে এক নারীকে অঙ্কিতার মা সাজানো হয়েছিল।
অঙ্কিতা ও তার স্বামীর আরো দাবি, গৌরী ভট্টাচার্য র্জজ বেকারের শ্যালিকা। তিনি মারা যাওয়ার সময় সব তথ্য-প্রমাণ দিয়ে গেছেন।
ডিএনএ পরীক্ষার দাবি জানিয়ে অঙ্কিতা ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। আমার বাবা জর্জ বেকার, একজন বিজেপি সাংসদ। আমার মা তসলিমা নাসরিন। আমি আমার পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় চাই। তাই আমি ডি-এন-এ টেস্টের চ্যালেঞ্জ করছি আমার বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধে। যদি আমার ডি-এন-এ আমার বাবা ও মায়ের সাথে না মেলে তাহলে আমি যথাযথ শাস্তি মাথা পেতে নেব। আর যদি ডি-এন-এ মিলে যায় তাহলে আমার বাবা ও মা এবং এই ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে যথাযথ শাস্তি গ্রহণ করতে হবে। আশাকরি আমার বাবার ও আমার মায়ের এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অসুবিধা হবে না, যদি উনারা সঠিক থাকেন। আমি অনুরোধ করছি আমার দেশবাসীর কাছে আপনারা আমাকে আশীর্বাদ করুন এবং আমার পাশে থাকুন, যাহাতে আমি এই কঠিন লড়াইয়ে বিজয়ী হতে পারি।’
তবে এ বিষয়ে জর্জ বেকার বলেন, তার কোনো মেয়ে নেই।
অঙ্কিতার করা মামলায় আদালতে তাকে সোমবার হাজির থাকতে বলা হয়। জর্জ জানান, তার আইনজীবী বিষয়টি আদালতে মোকাবিলা করবেন।
২০১৮ সালে এ বিষয়ে তসলিমা নাসরিন ফেসবুকে জানান, ‘বিনোদন আর কাকে বলে! … দোষ ওই অঙ্কিতা ভট্টাচার্য নামের মেয়ের, সে প্রেস কনফারেন্স ডেকে এমন একটা আজগুবি খবর দিয়েছে। কোনো সাংবাদিক কিন্তু আমাকে ফোন করে তথ্যের সত্যতা জানতে চায়নি। মেয়েটা কী উদ্দেশে এমন সব মিথ্যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা সাংবাদিকদের উচিত, বের করা। কোনো পাগল এসে যা তা বল্লো, সাংবাদিকদের কি তা ছাপিয়ে দেওয়া উচিত যাচাই না করে? পুরোনো ছবি বলে যেটা ছাপিয়েছে, সেটা সল্টলেকের রেখাচিত্রমের মালিক শিল্পী রেখা চক্রবর্তী আর তার নাতনির সঙ্গে।’
অঙ্কিতা ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান, ‘নমস্কার। আমি অঙ্কিতা ভট্টাচার্য। আমার বাবা জর্জ বেকার। উনি বিজেপি সাংসদ। আমার মা তসলিমা নাসরিন। বাংলাদেশী বিতর্কিত লেখিকা। আমি গত এক বছর আগে কলকাতা প্রেসক্লাব থেকে প্রেস কনফারেন্স করে আমার পিতৃ ও মাতৃ পরিচয় দাবি করেছি। ঠিক তারপর কেন্দ্র বিজেপি পার্টি রাজ্য বিজেপি পার্টিকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বিজেপি পার্টি তাদের সাংসদকে বাঁচানোর জন্য চুপচাপ বসে আছেন। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। যদি আমি সঠিক না থাকি তাহলে কি ওনারা চুপচাপ বসে থাকতেন? যদি আমার দাবি মিথ্যা হতো তাহলে আজ অনেক কিছু ঘটে যেত। এখন তো সত্য কথা বললে ভয় দেখায় দেশদ্রোহীতার কেসের কথা শোনায়। ভারত আজ গণতান্ত্রিক দেশ। এই গণতান্ত্রিক দেশে অন্যায়কে অন্যায় বলতে পারবেনা এটা কোন ধরনের মানসিকতা। আমি দাবী রাখছি তদন্ত কমিশন বসানো হোক। আমার কথা সত্য মিথ্যা প্রমাণিত হোক। আমার কাছে যথেষ্ট পরিমান তথ্য আছে। আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আমার বাবাকে অর্থাৎ বিজেপি সাংসদ জর্জ বেকারকে। আমি তারই প্রস্তুতি নিচ্ছি আগামী দিনে। প্রত্যেক মেয়ের কাছে সবথেকে প্রিয় তার বাবা। আমি আমার বাবার কথা মাথায় রেখে আমি শুধুমাত্র দাবি রেখেছি এবং কলকাতার আলিপুর দেওয়ানী আদালত থেকে টাইটেল স্যুট এর মামলা করেছি। তার কারণ আমার বাবার বয়স যথেষ্ট হয়েছে। এটা ভেবে আমি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে বোঝা উচিত ছিল বিপক্ষকে বিপক্ষের চোখেই দেখা উচিত। সাধারন জনগন আপনারা ভাবুন আমার বাবা একজন বিজেপি সাংসদ, এবং আমার মা তার সারা বিশ্বে নাম আছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার, এবং রাজ্যের প্রথম সারির সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমার দাবি জানিয়েছি। অপরদিকে আমার বাবা নিজেকে বাঁচানোর জন্য সব সময় বলে আসছেন আমার দাবি ভিত্তিহীন, যদি তাই হয় তাহলে আমার বাবা কেন আমার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেননি এতদিন ধরে। উনি তো পারতেন আমার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইল, মানহানি মামলা করতে! কিন্তু পারেননি তার কারণ উনি ভালো করে জানেন এসব মামলা যদি আমার মেয়ের বিরুদ্ধে করি তাহলে আমার মেয়ে আমার বিরুদ্ধে আমার কাছে থাকা সমস্ত প্রমাণ তথ্য দিয়ে প্রমাণ করে দেবে। এছাড়া আমার কাছে আরো অনেক তথ্য আছে সেগুলি আমি এখনো ব্যবহার করিনি। আমি এখন আমার বাবা নাটক দেখছি। কারণ আমার বাবা অনেকদিন নাটক কোম্পানির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নাটক আমার বাবা খুব ভালোই করতে পারেন। আমি যখন মনস্থির করেছি আমি আমার পিতৃপরিচয় নেবো। তাই আমি আমার এই দাবি থেকে এক বিন্দু সরবো না। আমি আসতে আসতে সাধারণ জনগণের কাছে সব বলে দেব। সাধারণ জনগণকে জানা উচিত আমার সাথে ঠিক কি কি ঘটনা ঘটেছে। আমার সাথে কি ধরনের মানসিক অত্যাচার হয়েছে। এর ভিতর কি রহস্য লুকিয়ে আছে। অপরদিকে একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি, আমাদের দেশের মহিলা কমিশন, নারী ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী, মানব অধিকার কমিশন, প্রশাসন, এবং পশ্চিমবঙ্গের বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা কি?
এর সাথে আরেকটি প্রশ্ন নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন এত চুপচাপ কেন? চুপ থাকা অনেক কিছু বুঝিয়ে দেয়!’