জাকির হোসেন সুমন, ব্যুরো চিফ ইউরোপ : প্রাণঘা'তি করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালিতে বৈধতা পেতে যাচ্ছেন ৬ লাখ অবৈধ অভিবাসী। গত ১৮ এপ্রিল এমন ইঙ্গিত দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।
নানা আলোচনার মধ্য দিয়ে বুধবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় চূড়ান্তভাবে পাস হলো অবৈধ অধিবাসীদের বৈধকরণ অধ্যাদেশ। এ উদ্যোগে করোনায় বিপর্যস্ত দেশটিতে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
সহজ শর্তসাপেক্ষে বৈধকরণের এই প্রক্রিয়া ইতালিতে খুলছে দুইটি সুনির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে। প্রথমত যারা চলতি বছরের ৮ মার্চের আগে থেকে কৃষিকাজ কিংবা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সেবাযত্ন ও বাসাবাড়ির ডোমেস্টিক কাজে নিয়োজিত ছিলেন তাঁরাই বৈধ হবার সুযোগ পাবেন।
ইতালিতে অবৈধদের কথা বিবেচনা করে ৫৫ বিলিয়ন ইউরোর একটি ডিগ্রি চূড়ান্ত হয় গত ১৩ মে। এই ডিগ্রিতে বলা হয়েছে যারা সাময়িকভাবে কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে বাসায় আছেন তাদের মূল আয়ের শতকরা ৮৫ ভাগ অর্থ প্রদান করা হবে। বেবি সিটারের একটি বোনাস দেওয়া হবে, বেকারদেরকে বিশেষ তহবিলের আওতায় অর্থ প্রদান করা হবে। এরকম অনেকগুলো সেক্টর নির্ধারণ করে এই ঘোষণা করা হয়।
এর সাথে ইমিগ্রেশন বিষয়টিও জড়িত। সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের কারণে ইতালীতে অবৈধ অভিবাসীরা বৈধতা পাচ্ছে। যদিও এটি আরও তিন, চার মাস পূর্বে আলোচনায় ছিল বিষয়টি।
তবে শুধুমাত্র দুটি ক্যাটাগরিতে এই বৈধতা দেবার কারণে অনেক বাংলাদেশী এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। কৃষিকাজ এবং বাসাবাড়ির কাজ ও প্রবীণদের (কল্ফ ও বাদান্তে) দেখাশোনার কাজে নিয়োজিত অবৈধ অভিবাসীরাই এ সুযোগ পাবে। দেশটির কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, এই ২ সেক্টরের বাইরে এই মুহূর্তে আমাদের বিবেচনায় অন্য কিছু নেই-মৌসুমী কাজের ভিসা নিয়ে আসা প্রায় ২ লাখ প্রবাসী শ্রমিক এখানে অবৈধ হয়ে পড়ে। করোনাভাইরাসের কারণে কৃষিখাতে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়।
আগামী ১ জুন থেকে ১৫ই জুলাইয়ের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীরা বৈধতার জন্য আবেদন করে পারবেন। তবে চলতি বছরের ৮ মার্চের আগে থেকে যাঁরা কৃষিকাজ কিংবা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সেবাযত্ন ও বাসাবাড়ির ডোমেস্টিক কাজ করছেন তাঁদের মালিকরা নিজ শ্রমিকের জন্য আবেদন করবেন। কাজের মালিক ছাড়াও শুধুমাত্র তাঁরাই আবেদন করতে পারবেন যাঁদের স্টে পারমিট ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবরের পর নবায়ন হয়নি। এই দুই ক্যাটাগরি ছাড়া বৈধতার ভিন্ন কোন সুযোগ অধ্যাদেশে নেই।
এক্ষেত্রে কাজের মালিকরা উপযুক্ত প্রমাণসহ সরকারি ট্যাক্স ৪০০ ইউরো জমা দিয়ে ১ জুন থেকে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে আবেদন করতে পারবেন। কাজের কন্ট্রাক্ট যতদিনের করা হবে ঠিক ততো সময়ের জন্যই সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে স্টে পারমিট (পেরমেসসো দি সোজ্জর্নো) দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী প্রফেসর জুসেপ্পে কন্তে’র ক্যাবিনেটে অনুমোদনের জন্য অধ্যাদেশ এভাবেই চূড়ান্ত হয়েছে।
অধ্যাদেশ মোতাবেক কাজের কন্ট্রাক্ট বা মালিক ছাড়াও আরেক বিশেষ ক্যাটাগরিতে অবৈধ অধিবাসীরা ইতালিতে এ যাত্রায় বৈধতার আবেদনপত্র জমা দিতে পারবেন মাত্র ১৬০ ইউরোর খরচে। যাদের স্টে পারমিট (পেরমেসসো দি সোজ্জর্নো) ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবরের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছিল, এই ক্যাটাগরিতে শুধুমাত্র তাঁরাই কাজ খুঁজে নেয়ার জন্য ৬ মাসের বিশেষ স্টে পারমিট পাবেন। কাজ খুঁজে পেলে তা পরিবর্তন করে নেয়া যাবে নর্মাল স্টে পারমিট হিসেবে। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কৃষিকাজ কিংবা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সেবাযত্ন ও বাসাবাড়ির ডমেস্টিক কাজে যোগদান সাপেক্ষেই স্টে পারমিট পরিবর্তন করা যাবে।
সর্বশেষ ২০১২ সালে ইতালি অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়। দীর্ঘ ৮ বছর পর ইতালি সরকারের এই সিদ্ধান্তে অবৈধ অভিবাসীদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। তবে দালালদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কমিউনিটি নেতারা।-কালের কণ্ঠ