তসলিমা নাসরিন : সৌরভের মতো ফিট ছেলেরও কিনা হার্ট অ্যাটাক। শরীরে কোনও মেদ নেই, কিন্তু হার্টের আর্টারিতে মেদ। এর কারণ জিন। জিন হলো আল্লাহ খোদা ভগবান ঈশ্বরের ডাকনাম। ভবিষ্যত কপালে লেখা থাকে না, লেখা থাকে জিনে। সুতরাং যত ফিটই হও না কেন, জিম করে দিন রাত যতই পার করো না কেন, জিন যা করার তা করবে।
আমার বাবার হয়েছিল হার্ট অ্যাটাক। আমার দুই দাদারই হয়েছিল হার্ট অ্যাটাক। একজনের হার্টের সব আর্টারি ব্লক ছিল, বাইপাস সার্জারি হয়েছে। আরেকজন প্রথম অ্যাটাকে বেঁচে গেলেও, দ্বিতীয় অ্যাটাকে বাঁচেনি। এই ফ্যামিলি হিস্ট্রি নিয়ে যখন আমি জিম করি, তখন ভাবি, জিম আমাকে বাঁচাবে না, বাঁচালে জিন বাঁচাবে। কিন্তু জিনোম থেরাপি করে খারাপ জিনগুলো ফেলে দেবো সে ক্ষমতা আমার নেই। অগত্যা যা হবে তা হবে বলে দিন যাপন করি। জানি যে কোনও মুহূর্তে দরজায় কড়া নড়ার শব্দ পাবো।
বাপ মা ভাই বোন কার কোন রোগ হয়েছিল, কে কোন বয়সে মারা গেছে, এই তথ্যই ইঙ্গিত দেবে আমার কী আছে, কী হবে, এবং আমি কবে। আমার ফ্যামিলির লোকেরা কেউই দীর্ঘজীবী নয়। সুতরাং আমিও লোল চর্ম হবো না, ফোকলা দাঁত হবো না, লাঠি হাতে নুয়ে নুয়েও হাঁটবো না। সে বয়সে আমাকে আমার জিনই পৌঁছোতে দেবে না।
সৌরভ দ্রুত চিকিৎসা পেয়েছেন বলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। মাঝে মাঝে আমি ভাবি, আমার যদি হার্ট অ্যাটাক হয়, পোষা বেড়ালটি কিছুক্ষণ মিউ মিউ করবে, কিন্তু আমাকে হাসপাতালে তো ও নিয়ে যেতে পারবে না। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ, কেউ তো ঘরে ঢুকতেও পারবে না। না, ওসব ভেবে লাভ নেই। জিন যদি সিদ্ধান্ত নেয়, প্রথম অ্যাটাকে আমাকে মারবে না, তাহলে মরবো না।