প্রবাস ডেস্ক : অবৈধভাবে সমুদ্রপথে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার সময় ভূমধ্যসাগরে হিটস্ট্রোকে আরো চার যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরা হলো মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শংকরদী গ্রামের আজিজুল সিকদারের ছেলে সাগর সিকদার, হোসেনপুর এলাকার আজিজ শেখের ছেলে জিন্নাত শেখ, ছাতিয়ানবাড়ী গ্রামের বিজেন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সাধন মল্লিক ও পার্শ্ববর্তী মুকসুদপুর উপজেলার তপারকান্দি গ্রামের ফজলু মুন্সীর ছেলে সজিব মুন্সী।
একই বোটে থাকা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া হৃদয় শেখ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সন্তান আর ফিরবে আসবে না, এ শোক কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না নিহতের স্বজনরা। নিখোঁজ সংবাদের পর রবিবার মৃত্যুর খবর আসার পর পরই প্রত্যেকের পরিবারে চলছে কান্নার রোল। সেই সাথে এলাকাবাসীও শোকাহত।
স্বজনরা জানান, তিন মাস আগে দালালদের খপ্পড়ে পড়ে মাদারীপুরের রাজৈর ও মুকসুদপুরের অনেকেই লিবিয়ায় আটকা পড়ে। গত ১৯ জুলাই লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় দালালরা ইতালির উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে বাধ্য করে। পরে বিভিন্ন দেশের সীমান্তে পৌঁছানোর পরও নামতে না পারায় ৪ দিন বোটে করে ভূমধ্যসাগরে ভাসতে থাকে তারা। এতে প্রচণ্ড রোদে হিটস্ট্রোকে প্রাণ হারায় তারা।
রাজৈর উপজেলার ঘোষালকান্দি গ্রামের ওদুত মিয়ার ছেলে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া হৃদয় শেখ মৃত পরিবারদের ফোন করে জানায়, প্রথমে হৃদয় কাজী আমার কোলেই পানি পানি করতে করতে মারা গেছে আর সাগর সিকদার, জিন্নাত শেখ, সজিব মুন্সী ও সাধন মল্লিক এরা নিখোঁজ থাকার পর খোঁজখবর নিয়ে তাদেরও মৃত্যুর নিশ্চিত খবর পাই।
মৃত জিন্নাত শেখের মা হালিমা বেগম বলেন, উপজেলা সত্যবর্তী গ্রামের দালাল রেজাউল শেখ ও শহিদুল মোল্লা আমার ছেলেকে ইতালি পৌঁছে দেবে বলে কয়েক দফায় ১১ লাখ টাকা নিয়েছে। তারপর আমার ছেলের মৃত্যুর খবর শুনতে হলো। আমি দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
ভূমধ্যসাগরে মুকসুদপুর উপজেলার তপারকান্দি গ্রামের মৃত সজিব মুন্সীর মা সাহানা বেগম জানান, আমার ছেলে সজিবের সাথে সর্বশেষ আমার সাথে ১৮ জুলাই ফোনে কথা হয়েছে। তখন আমার ছেলে আমাকে বলছিল মা আমার জন্য দোয়া করো আমাকে এখন দালাল গেম ঘরে নিবে। এরপর আর কথা হয়নি।
এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। হৃদয় শেখের সাথে ওই ঘটনায় রাজৈর উপজেলার আহত প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন যুবক গুরুতর আহত অবস্থায় তিউনিসিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের ফিরে পেতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন অসহায় পরিবারগুলো। রাজৈর থানার ওসি (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে পরিবার থেকে অভিযোগ দিলে নেওয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা।