প্রবাস ডেস্ক: বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন আবারো ইসলাম ধর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তসলিমা গত শনিবার ভারতের একটি সাহিত্য উৎসবে যোগ দিয়ে বলেন, ‘ভারত সহিষ্ণুই। তবে সহিষ্ণু নন শুধু দেশের (বাংলাদেশের) কয়েক জন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশে (ভারত) হিন্দুদের ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়েই যত আলোচনা। অসহিষ্ণুতা বির্তকে একই ভাবে নিশানা করা উচিত মুসলিম ধর্মান্ধতাকেও।
অবশ্য এর আগে গত বছর যখন অসহিষ্ণুতা বিতর্কে গোটা ভারত উত্তপ্ত, বিষয়টি নিয়ে সরব হয়ে বিপাকে শাহরুখ খান-আমির খান, তখনও কিন্তু সমালোচনার সুর শোনা যায়নি তসলিমার গলায়।
উল্টো টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, ‘ভারত সহিষ্ণু দেশ’। দিল্লি সাহিত্য উৎসবে গত কাল হঠাৎই কিছুটা অন্য স্বর বিতর্কিত এই লেখিকার গলায়।
শনিবার নয়া দিল্লির ওই অনুষ্ঠানে তসলিমা আরও বলেন, ‘ভারতে অসহিষ্ণু শুধু কিছু মানুষ। সব দেশে, সব সমাজেই এ রকম কয়েক জন থাকে।’ তবে হিন্দু নয়, তাঁর আক্রমণের নিশানায় ছিল মুসলিম ধর্মীয় গোঁড়ামি। তসলিমার মতে, এখানে মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে যতটা সুর চড়ানো দরকার, আদৌ তা হয় না।
চিকিৎসক-লেখিকার স্বতন্ত্র স্বর শুনলেই কণ্ঠরোধ করার এই রোগ সারবে শুধু বাক্স্বাধীনতা দিলে। ইতিহাস ঘেঁটে উদাহরণও দিতে ভোলেননি তসলিমা। তার কথায়, ‘রামমোহন রায় যখন সতীদাহ প্রথা রদ করেন, অনেকেই আঘাত পেয়েছিলেন। নারী শিক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যখন নতুন আলো দেখালেন, আপত্তি কম ওঠেনি। ধর্মান্ধদের গোঁড়ামি নিয়ে প্রশ্ন তুললে তারা আঘাত পাবে, এই ভেবে কি সকলে মুখ বন্ধ করে রাখবে নাকি?
বাক্স্বাধীনতার জন্য তাঁর লড়াইটা অবশ্য শুরু হয়েছিল বহু বছর আগেই। তসলিমার উপন্যাস ‘লজ্জা’ ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছে, এই অভিযোগে ১৯৯৪ সালে নিজের দেশ থেকে বিতাড়িত হন তিনি। প্রাণনাশ নিয়ে ধর্মীয় মৌলবাদীদের ফতোয়াও সঙ্গী তার পর থেকেই। তাঁর বই ‘দ্বিখণ্ডিত’ নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি পড়শি দেশ ভারতেও। আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হতে পারে, এই যুক্তি দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ২০০৩-এ বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন বাম সরকার। বাংলাদেশের পর কলকাতা তার প্রিয় শহর— বহু বারই নিজের মুখে সে কথা জানিয়েছিলেন লেখিকা। কিন্তু ২০০৭ সালে কিছু ঘটনার পর কলকাতার পাটও চোকাতে হয় তাঁকে। তার পর থেকে কখনও আমেরিকা, কখনও নরওয়ে, জার্মানি, সুইডেন— একের পর এক দেশে স্বেচ্ছা নির্বাসনে কেটেছে তাঁর দিন।
সূত্র: আনন্দবাজার
১১ জানুয়ারি ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ডটকম/জুবায়ের/রাসেল