প্রবাস ডেস্ক : কাল রাতে মহসীন খানের আত্মহত্যার ভিডিওটি দেখলাম। এক সেকেন্ড আগেই যিনি কথা বলছিলেন, তিনি মৃত পড়ে আছেন। জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে হয়তো এক সুতোরও ব্যবধান নেই। চেয়ারে এলিয়ে পড়া তার নিস্পন্দ শরীরটি দেখছিলাম আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলাম।
ভাবছিলাম এরকম অভিমান তো কত মানুষেরই থাকে। অভিমান কতটা তীব্র হলে মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে, আমি জানি না। অসুখ, উপেক্ষা, অপমান, প্রতারণা, আঘাত, কত কিছুরই তো শিকার আমি। আমি তো কল্পনাও করতে পারি না যে কোনো একদিন আমি মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগার টিপবো।
জানি না মনের কোন অবস্থায় মানুষ ওই কাজটি করে ফেলতে পারে। ব্যর্থতাবোধ কতটা মারাত্মক হলে মানুষ অমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে জানি না! আসলে যে যতই বলুক অমন সিদ্ধান্ত কখনো নেবে না, কেউ বলতে পারে না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে আছে। মানুষের তো সিদ্ধান্ত বদলও হয়।
আমি বলি জীবনের যে কোনো বয়স, যে কোনো অসুখ, যে কোনো ঝুঁকি, যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মতো মনোবল আমার আছে। কারণ আমি জানি ওইপারে আর কোনো জীবন নেই। পৃথিবীই আমাদের এপার-ওপার।
জীবন আমাদের ঘুরে ফিরে একটিই। এই ভাঙ্গাচোরা জগতের জীবনটিই জীবন। তাই এটির রূপরসগন্ধ যতদূর সম্ভব হয় বেঁচে থেকে উপভোগ করতে চাই। বলি, কিন্তু তারপরও এটা ঠিক যে, কেউ বলতে পারে না, ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে আছে।
টার্মিনাল স্টেজের ক্যানসারের ভয়ঙ্কর ব্যথা কারও কারও পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হয় না। যখন আরোগ্যের কোনো আশা থাকে না, ব্যথার ওষুধও যখন ব্যথা কমাতে পারে না, তখনই কিছু মানুষ ডাক্তারের সাহায্য নিয়ে আত্মহত্যা করে। এই স্বেচ্ছামৃত্যু কিছু দেশে বৈধ, কিছু দেশ একে বৈধ করার জন্য চেষ্টা করছে। বাঁচার অধিকার যেমন আছে, মরার অধিকারও মানুষের থাকা চাই। মহসিন খান তো সবার চোখের সামনে নিজেই মারলেন নিজেকে। তার শরীরটাকে কাটাছেঁড়া করার দরকার ছিল না। (তসলিমা নাসরিনের ফেসবুক পোস্ট)