প্রবাস ডেস্ক : গত কয়েক মাস ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যে দেশে ফেরা নিয়ে দোটানায় ছিলেন সেখানে অবস্থানরত অনেক বাংলাদেশি। সিলেটের বাসিন্দা মো. আব্দুল কাইয়ুম বছর চারেক আগে উচ্চশিক্ষার জন্য ইউক্রেনে পাড়ি জমান। সবকিছু ভালোই চলছিল। তবে গত কয়েক মাস ধরে চলতে থাকা উত্তেজনায় পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।
কাইয়ুম ভেবেছিলেন কষ্ট হলেও রাজধানী কিয়েভেই থেকে যাবেন। তবে বৃহস্পতিবার ভোরে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর খবর পেয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে হেঁটেই ইউক্রেন ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলেন, আমি কিয়েভ শহরে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছি। এখানকার পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়, থমথমে। বৃহস্পতিবারের পরিস্থিতি দেখে পোল্যান্ড যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কাইয়ুম বলেন, পোল্যান্ড যেতে চাচ্ছি ঠিকই, তবে কোথাও কোনো গাড়ির ব্যবস্থা নেই। হাঁটা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই। বর্ডারের উদ্দেশে রওনা করেছি। হাঁটার মধ্যে আছি। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে হাঁটছি। জায়গায় জায়গায় থেমেছি। চেষ্টা করেছি গাড়ি বা ট্যাক্সির ব্যবস্থা করার কিন্তু কোনোভাবেই পাওয়া যাচ্ছে না। কবে যে পোল্যান্ড সীমান্তে গিয়ে পৌঁছাব সে চিন্তা করছি।
ইউক্রেনের মারিউপল এলাকায় বসবাস করেন বাংলাদেশি মাহমুদুল হাসান দোলন ও মেহেদি হাসান। তারা জানান, সকাল ১০টায় পোল্যান্ড সীমান্তের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়েছেন। প্রায় ছয় ঘণ্টার মতো সময় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেন। টিকিট কাউন্টার থেকে বাস আসবে বলে আশ্বস্তও করা হয় তাদের। কিন্তু দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর জানানো হয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস চালাবে না কোম্পানি। এ কথা শুনে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান তারা।
মেহেদি হাসান বলেন, আমরা বর্তমানে মারিউপল আছি। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। সকাল ১০টা থেকে এ পর্যন্ত কেবল ঘুরছি। বাস ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু এখন বলছে ছাড়বে না। অন্য কোনো গাড়িও পাচ্ছি না। কী করব বুঝতে পারছি না। এখান থেকে কোনোদিকে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এত দূর আমরা কীভাবে যাব? আমাদের জন্য দূতাবাস যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় ভালো হয়।
ইউক্রেনে উচ্চশিক্ষার জন্য গিয়ে অবৈধভাবে অবস্থান করা দুই বাংলাদেশির সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিরাপদে অবস্থানে যেতে চান। তবে দেশে ফিরতে রাজি নন। রাসেল নামের এক বাংলাদেশি বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমি এখানে আছি। আমি এখন নিরাপদ কোথায় গিয়ে থাকতে চাই। তবে দেশে যেতে চাই না।