প্রবাস ডেস্ক : এক বাংলাদেশির ভাবনায় শুরু, মিশরের ছোট্ট দ্বীপে যেন ‘সবুজ বাংলাদেশ’! ফরিদপুরের আলমগীর হোসেন ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে সুদূর ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তার পক্ষে ছিল না।
ইউরোপ নেওয়ার কথা বলে ১৫ বছর আগে ট্রানজিট ভিসায় মিশরে আনে মানবপাচার চক্র। চুক্তি অনুযায়ী কাজ না দিয়ে তাকে মিশরের রাজধানী কায়রোতে ফেলে যায় চক্রটি। এর পর কষ্টের জীবন শুরু হয় আলমগীরের। দুবছর গার্মেন্টসে চাকরি করেন। ২০০৮ সালে গার্মেন্টের চাকরি দেন।
আলমগীর জানান, প্রতিদিন নীলনদ দিয়ে যাতায়াতের সময় দুই পাড়ের সবুজে তার দৃষ্টি আটকে যেত। সেখান থেকেই তার নতুন ভাবনা শুরু। ২০০৮ সালে প্রথম নীলনদের একটি দ্বীপে এক কাঠা জমি ৫০০ মিশরীয় পাউন্ডে লিজ নিয়ে সবজি চাষ শুরু করেন তিনি।
প্রথম বছর লালশাক এবং করোলা চাষ করেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম বছর ফলন ভালো হয়নি। পরের বছর থেকে কপাল খুলতে থাকে, বাড়তে থাকে সবজি চাষের পরিধি। কায়রোর কূটনৈতিকপাড়া আল-মাদির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ঐতিহাসিক নীলনদ।
সুদান, কঙ্গো, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, উগান্ডা, ইথিওপিয়া ও মিশরজুড়ে বিস্তৃত এ নীলনদে রয়েছে অসংখ্য ছোট ছোট দ্বীপ। ছোট একটি দ্বীপের নাম জাজিরাতুল মাদি। এ দ্বীপেই আলমগীর হোসেন এক সময় গড়ে তোলেন ‘তাজা এগ্রো’ নামের ছোট্ট একটি কৃষি খামার।
আলমগীর হোসেন বলেন, ইউরোপে পাড়ি দেওয়ার জন্য ১৫ বছর আগে মিশরে এসেছিলাম। এখানে বাংলাদেশের কোনো শাকসবজি পাওয়া যায় না। তা ছাড়া টাকা-পয়সাও খুব একটা ছিল না। তাই নিজেই উদ্যোগী হই। দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের শাকসবজির বীজ ও চারা সংগ্রহ করি।
নীলনদের এ দ্বীপের এক কাঠা জমি লিজ নিয়ে কাজ শুরু করি। এখন ১২ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করছি। প্রতি মাসে কর্মচারীদের ৫০ হাজার পাউন্ড বেতন দিচ্ছি। জানা গেছে, এ দ্বীপের জমি খুবই উর্বর, সার ও কীটনাশক ছাড়াই শাকসবজি ফলে। ফলনও খুব ভালো। আলমগীর বলেন, আমার সবজি মিশরের বন্দর নগরী আলেক্সান্ড্রিয়াসহ রাজধানী কায়রোর বড় বড় শপিংমলে যায়।
আলমগীর জানান, তিনি শিম, করলা, লাউ, বরবটি, সজনে, কাঁচকলা, কচুরলতি, কাকরোল, ঢেঁড়স, কাঁচামরিচ, পুঁইশাক, এমনকি কলমিশাক ও পেঁপেও চাষ করেন।
আলমগীরের সবজি বাগানে বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অনেক মিশরীয় শ্রমিক কাজ করেন। তার মধ্যে একজন আশরাফ সাঈদ। তিনি বলেন, আমি এ দ্বীপেরই বাসিন্দা, আলমগীর হোসেনের সবজি বাগানে কাজ করি দীর্ঘদিন ধরে।
বাগানে দুজন বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করেন। এদের একজন তানভীর। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘এখানে সবজির ব্যাপক ফলন হয়। বাংলাদেশের মতো রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। জৈব সার-ই যথেষ্ট। উৎপাদনও বেশি। সব মিলে আমরা খুবই ভালো করছি।’
আলমগীর হোসেনের বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের বড় বাঙরাইল গ্রামে। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে কূটনৈতিকপাড়ায় বসবাস করেন। তার ছেলে আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মেয়ে ব্রিটিশ স্কুলে পড়াশোনা করে। প্রতি মাসে দেড় থেকে দুই লাখ পাউন্ডের সবজি বিক্রি হয়। সামনে আরও উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশি সবজির পাশাপাশি এখন মিশরীয় সবজি উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে তার।
আলমগীরের সবজি বাগান নিয়ে কায়রোস্থ মেক্সিকান দূতাবাসের আবাসিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফসার হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, দীর্ঘ ত্রিশ বছর যাবৎ আমি মিশরে বসবাস করছি। ‘তাজা এগ্রো’ নামের এ সবজি বাগানটি হওয়ার আগে এ দেশে আমাদের দেশের শাকসবজি পাওয়া যেত না।