শেখ আরিফুজ্জামান, মালয়েশিয়া থেকে: অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি... ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মহান মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে গতকাল সন্ধ্যায় কুয়ালালামপুরের রাজধানী রেষ্টুরেণ্টে দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করে মালয়েশিয়া বিএনপি।
এসময় বক্তারা বলেন, আমাদের সকল লড়াই-সংগ্রামে ভাষা আন্দোলন প্রেরণা জোগায়। ভাষার জন্য লড়াই করে ২১ শে ফেব্রুয়ারি এখন ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত।
একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সকল ভাষা ও জাতির অধিকার, মর্যাদা প্রতিষ্ঠা এবং হারানো গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের মুক্তি অর্জনের কাজ এখনো পূর্ণ হয়নি। একুশ এখনো আমাদের সেই মুক্তির পথ দেখায়।
তরুণ প্রজন্মদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানা মিলকীর উপস্থাপনায় ও দেশ, জাতি, মুসলিমউম্মাহ এবং ভাষা আন্দোলনে সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া পরিচালনা করেন মাওলানা সিরাজুল ইসলাম। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি শহীদউল্লাহ শহীদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, মহান মাতৃভাষা দিবসের দিনটি আজ শোকের দিনে পরিণত হয়েছে। কারণ বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার বাংলাদেশের জনগণের উপর যে দমন, পিড়ন, নির্যাতন চালাচ্ছে তাতে আমরা শোকাহত। আমরা এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই বিএনপি জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের হারানো গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনাটাই বিএনপির জন্য বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশের জনগণ অত্যাচার পছন্দ করে না উল্লেখ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, প্রবাসে আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উর্পাজন করে দেশে পাঠায়। আর সেই রেমিটেন্সের টাকা দিয়ে সরকার চলে অথচ সরকার আজ আমার ভাইদেরকে প্রশাসন দিয়ে নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন, দমন-পিড়ন, জেল-জুলুম, মামলা এমন কোনো অত্যাচার নাই যে এই করছে না। এ সবের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দলের নেতাকর্মীদের নামে সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়ার আহ্বান জানান।
বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম কে রহমান আরিফ বলেন, ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ কায়ছে আজম জিন্নাহ কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, তখন তিনি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে উপস্থিত অনেকেই না-না বলেন এবং প্রতিবাদ শুরু হয়।
২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ আবারো বলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবে উর্দু, অন্য কোন ভাষা নয়। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারী খাজা নজিম উদ্দিন পল্টন ময়দানে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা আবারো ঘোষনা দেন। এ জন্য ৪ ফেব্রুয়ারী ঢাকাসহ ২১ ফেব্রুয়ারী সারা প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু হয়। কিন্তু ২০ ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা জারি করে এবং ৪ জনের বেশি একত্রে সমাবেশ করা যাবে না বলে ঘোষণা দেয়। এ সময় শুরু হয় প্রতিবাদ, মিছিল আর এই মিছিলেই পুলিশ বেপোরোয়া গুলি চালায়, নিহত হয় রফিক,সালাম,জব্বার, বরকতসহ অনেকেই।
সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সালাউদ্দিন বলেন, বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বাংলা ভাষাকে বিশ্বে বুকে রেখে গেছেন তারই ফলস্রুতিতে আজকে আমরা পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকি মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলতে পারি। প্যারিসে ইওনেস্কোর ৩০ তম অধিবেশনে ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে সর্বসম্মত ভাবে ঘোষিত হয় বাংলা ভাষাকে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ শে ফেব্রুয়ারী কোটি কোটি বাঙ্গালীর আনন্দের শিহরনে জেগে উঠার কথা থাকলেও অনেক দু:খ এবং কষ্ট মনে। স্বাধীন আমরা পেয়েছিলাম পাকিস্তানের কাছ থেকে, কিন্তু আমরা কি স্বাধীন? দেশে চলছে একনায়কতন্ত্র, কোনো বাকস্বাধীনতা নাই, কারো কিছু বলার অধিকার নাই, সংবাদপত্রের অধিকার নাই, বোবার মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া। মোট কথা বাকশাল কায়েম করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন দমন-পিড়ন, হত্যা থেকে শুরু করছে, এই সরকার সবই করছে। এ সময় তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, বর্তমান যুগ ইন্টারনেটের যুগ তাই এই সরকারের সকল দুর্নীতি, দমন-পীড়ন, নির্যাতনের কথা ফেসবুক, টুইটারের মাধ্যমে পৃথিবীর সবাইকে জানিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, মাহবুব আলম, তরুণ প্রজন্মদলের সহ-সভাপতি বাদল আহমেদ, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক হাবিব আহম্মদ, কেপং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কামাল উদ্দীন রানা, আব্দুল হালিম, ইমন হাসান, আব্দুল আলিম, সাজ্জাদুর রহমান, সবুজ সিকদার, শওকত সরদার, এসএম সুমন, মাসুদ রানা প্রমুখ।
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস