সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৮:৪৭

মালয়েশিয়াজুড়ে ব্যাপক অভিযান, আতঙ্কে অবৈধ প্রবাসীরা

মালয়েশিয়াজুড়ে ব্যাপক অভিযান, আতঙ্কে অবৈধ প্রবাসীরা

আহমাদুল কবির , মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ। রাজধানী কুয়ালালামপুর, সেলাঙ্গর, পেনাং ও জোহরসহ বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিদিনই বাণিজ্যকেন্দ্র, নির্মাণশিল্প, বাজার, রেস্তোরাঁ ও আবাসিক এলাকায় ধরপাকড় চলছে।

অভিযানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশি, ইন্দোনেশীয়, মিয়ানমার, নেপালি ও পাকিস্তানি নাগরিক আটক হচ্ছেন। চৌকিট, জালান সুলতান আজলান শাহ, গোম্বাক ও বান্দার বারু এলাকার মতো অভিবাসী বহুল অঞ্চলে হঠাৎ অভিযান চালানো হচ্ছে।

অনেক সময় স্থানীয় পুলিশ ও শ্রম দপ্তরও ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করছে। আটক বিদেশিদের অধিকাংশই ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ বা ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন। তারা ইমিগ্রেশন ডিপোতে পাঠানো হচ্ছে এবং বৈধ কাগজপত্র না দেখাতে পারলে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অভিবাসন দেশের আইন-শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তাই এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি বৈধ চ্যানেলে কর্মী আনার প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

অভিযানে বৈধ প্রবাসীরাও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। কাজ থেকে ফেরার পথে অনেকেই হঠাৎ ধরপাকড়ে পড়ছেন। দূতাবাসগুলো নাগরিকদের সবসময় বৈধ কাগজপত্র বহনের পরামর্শ দিয়েছে।

জনশক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার টিকিয়ে রাখতে হলে বৈধ শ্রমিক আনার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দ্রুত করতে হবে। অন্যথায় অবৈধ অভিবাসনের প্রবণতা কমানো কঠিন হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসনে এনএসআই’র ১৮ দফা প্রস্তাব
মানবাধিকারভিত্তিক সংগঠন নর্থ-সাউথ ইনিশিয়েটিভ (এনএসআই) মালয়েশিয়ায় প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীর জীবনমান উন্নয়ন ও অধিকার রক্ষায় ১৮ দফা সুপারিশ করেছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরের সময় প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলমের কাছে দেওয়া এক চিঠিতে এই প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

এনএসআই’র নির্বাহী পরিচালক আদ্রিয়ান পেরেইরা বলেন, অনৈতিক নিয়োগ প্রক্রিয়া, ঋণের বোঝা, মানবপাচার ও শোষণ শ্রমিকদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।

শ্রমিক শাহেদুল ইসলাম বলেন, উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে এখানে আসতে হয়েছে। বেতনও ঠিকমতো পাই না, আবার ভিসা সমস্যা হলে আটক হওয়ার ভয় থাকে।

বাংলাদেশি আরেক কর্মী জানান, কর্মস্থলে বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হই। নিরাপদ পরিবেশ জরুরি।

অর্থনীতিবিদ ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, বৈধ অভিবাসন শুধু মানবিক দায় নয়, অর্থনৈতিক প্রয়োজনও। মালয়েশিয়া থেকে প্রবাসী আয়ের বড় অংশ আসে। বৈধভাবে কাজ করলে আয় বাড়বে এবং অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনৈতিক নিয়োগ ও অতিরিক্ত ফি শ্রমিকদের ঋণের ফাঁদে ফেলছে। এনএসআই’র প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে এই দুষ্টচক্র ভাঙা সম্ভব হবে।

প্রধান সুপারিশসমূহ
অসুস্থ ও মৃত শ্রমিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসন ও ক্ষতিপূরণ, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধকরণ, আটক শ্রমিকদের আইনি সহায়তা, দুর্যোগে জরুরি সুরক্ষা, প্রতারক এজেন্ট ও পাচার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, পাসপোর্ট নবায়ন সহজতর করা, নারী শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ, অভিবাসী শিশুদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, হেল্প লাইন চালু।

অভিবাসী কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া
এক প্রবাসী নেতা বলেন, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে শ্রমিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া শ্রম সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসন দমনে অভিযান যেমন কঠোর আইন প্রয়োগের দৃষ্টান্ত, তেমনি প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য উদ্বেগও বয়ে আনছে। এনএসআই’র ১৮ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে শ্রমিকরা নিরাপদ অভিবাসনের সুযোগ পাবেন, যা উভয় দেশের অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সূত্র : জাগো নিউজ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে