সৈয়দ আলী আকবর, প্যারিস ফ্রান্স থেকে: মানুষ আজ লোভী পশুদের মতোই মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মানুষের অর্থলালসার রাজ্যে শিশুদেরও মুক্তি নেই।
আম গাছে আজ যা মকুল কাল তাই রসালো আম। একইভাবে আজ যারা কমলমতী শিশু কাল তারাই দেশের কর্ণধার। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু হত্যার যে চিত্র দেখা যাচ্ছে তা সত্যিই এ জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা হয়। সম্প্রতিকালে বাংলাদেশের বহুল আলোচিত এক ঘটনা হলো শিশু রাজন হত্যা। কেবল রাজনই নয় এর আগে পিছেও বহু শিশু হত্যা করা হয়েছে যার আজ পর্যন্ত কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শিশু হত্যা একটি সাধারণ ঘটনায় রূপ নিয়েছে।সভ্যদেশসমূহে মানুষ যেখানে বিবেকশক্তি ও স্বাধীনতাবোধের বড়াই করে সেখানেও কেন থাকবে মানবাত্মার অপমান ও নির্লজ্জতার এই উদাহরণ।
বহুল আলোচিত এই শিশু হত্যা বা নির্যাতনের অন্যতম একটি কারণ হলো শিশু শ্রম। বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগ লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এরা দারিদ্র্যের জ্বালায় নিজেদের সন্তানদের শিশু শ্রমিকের বৃত্তি নিতে বাধ্য করে। সারাদিন ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা পরিশ্রম করে ঐ শিশুটি যা উপার্যন করে তাতে তার নিজের আহারের সংস্থানই হয়না। অদক্ষ বলে তাদের উপর চলে অকথ্য নিপীড়ন। সামান্যতম অমনযোগের অভিযোগে লাথি ও বেত্রাঘাত সহ্য করতে হয়। এমনকি এই অত্যাচার এতটাই নির্মম হয় কখনো কখনো তা মৃত্যুরও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বিত্তবানদের গৃহে শিশু নির্যাতন হচ্ছে। এ সকল গৃহে কাজের মেয়ে হিসেবে যারা কাজ করে তাদের সামান্য অপরাধের জন্য পশু আত্মা গৃহিণী বা গৃহস্বামী অমানবিক শাস্তি দিয়ে থাকে। প্রায় প্রতিদিনই এরকম নৃশংস ঘটনা খবরের কাগজে প্রকাশ পাচ্ছে।এদের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
এসব শিশুদের চোখের জলের হিসাব হয়ত সভ্য সমাজে রাখার সময় নেই। কিন্তু এসব হাজার হাজার শিশুর কান্না ও তাদের লবণাক্ত অশ্রু আজকের পৃথিবীকে ভাবিয়ে তুলেছে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশে শিশু হত্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো অপরাধীদের শাস্তি না দেয়া। প্রতিটি শিশু হত্যার জোরালো দাবী করা হলেও শেষ পর্যন্ত আর অপরাধীদের শাস্তির দোরগোরায় দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। অপরাধীরা শাস্তি না পেলে অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পায় তার উৎকৃষ্ঠ উদাহরণ হলো এই শিশু হত্যা। এসকল হত্যা বন্ধের জন্য আইন প্রনয়ন ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন। যদিও বাংলাদেশে "শিশু ও নারী নির্যাতন আইন --- ১৯৯৫" বলবৎ থাকলেও এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। আসলে আইন কেবল প্রণয়নের মাধ্যমে সমস্যার বাস্তব সমাধান সম্ভব নয় যদি না তা বাস্তবে কার্যকর করা না হয়। কাজেই এ সমস্যার সমাধানের জন্যে কার্যকারী আইন প্রণয়ন করে অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে অন্যথায় বিশ্বমানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়বে।
১১ মার্চ ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এইচএস/কেএস