মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ, ২০১৬, ০৪:৪৬:৪২

রফিক আজাদের মৃত্যুতে নিউ ইর্য়ক প্রবাসীদের শোক প্রকাশ

 রফিক আজাদের মৃত্যুতে নিউ ইর্য়ক প্রবাসীদের শোক প্রকাশ

তায়বুর রহমান, নিউ ইর্য়ক থেকে: আধুনকি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক আজাদের মৃত্যূতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার শোক প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল  রফিক আজাদ ৫৮ দিন যাবত লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গত শুক্রবার সকাল থেকে তাঁর রক্তচাপ পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে ক্রমান্বয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। আজ দুপুরে তীব্র রক্ত সংক্রমণজনিত কারণে ২টা ১০ মিনিটে তাঁর মৃত্যু হয়।

তার দুই ছেলে অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ কানাডায় থাকেন। তাঁরা বাবাকে দেখতে দেশে এসেছিলেন। অভিন্ন আজাদ বাবাকে দেখে ১০ মার্চ কানাডা চলে যান। তিনি বাবার মৃত্যু খবর শুনে আবার দেশে চলে আসেন  সোমবার। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১৫ জানুয়ারি কবি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে তাকে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখান থেকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে বিএসএমএমইউতে তাকে ভর্তি করা হয়। বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কবির অবস্থার আরও অবনতি হলে তাঁকে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। দিনে দিনে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। বহুমুখী শারীরিক জটিলতাও দেখা দেয়। বিএসএমএমইউ’তে কবি আইসিইউ ইনচার্জ দেবব্রত বণিক ও কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী, পাঁচ সন্তান, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রবাসে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে।

কবি রফিক আজাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

 নিউ ইর্য়ক প্রবাসী ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিরা শোক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, জয়নাল আবেদিন,  যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদিকা আইরিন পারভীন,যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, ,যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হাছিব মামুন, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক ড. এম এ বাতেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপ প্রচার সম্পদক তৈয়বুর রহমান টনি, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এম এ করিম জাহাঙ্গীর, জাহাঙ্গীর আলম, এ্যাঃ মামুনুর রহমা্ন, কার্যকরি সদস্য সোহরাব সরকার, আমিনুল ইসলাম কলিন্স, আওযামী লীগ নেতা রুহলে চৌধুরী, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূর নবী, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক  মাসুদ হোসেন সিরাজী(মাসুদ)।মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শাহিন দিলওয়ার, মহানগর আওয়ামী লীগের সাইকুল ইসলাম,নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল হাসান, মুর্শেদা কাকন, শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক আনোয়ার হুসাইন, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের এ.কে.এম. তরিকুল হায়দার চৌধুরী, জাফর আহমদ, বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া, ইছমত হক খোকন, আবুল কাশেম, সাবেক ছাত্র নেতা সুব্রত তালুকদার।

আওয়ামী লীগ নেতা ফখর উদ্দিন, নাছির উদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন আতিকুর রহমান সুজন, সাইফুল্লাহ ভূইয়া, একরামুর হক সাবু, স্বপন কর্মকার, ইসমাইল হোসেন স্বপন, মোঃ ওলিউল্লাহ, মোঃ শ্যামল, মীরু সিক্দার, মঞ্জুরুল আলম বিটি, আসাদুর রহমান ডেনি, সেলিম মাহমুদ, নিপু মিয়া, খন্দকার জাহিদুল ইসলাম, মোঃ সুমন আলী, মোঃ রবিউল ইসলাম প্রমূখ।

যুক্তরাস্টের প্রবসী নাট্য ও সাংস্কৃতি মোদী ব্যক্তিরা  মৃত্যুতে গভীর ভাবে শোকাহত। কবি শহীদ কাদরী, স্বাধীন বাংলা বেতার শিল্পী রথ্রীন্দ্র নাথ, শহীদ হাসান, নাট্যকার জামাল উদ্দিন হোসেন, বেলাল বেগ, কবির আনোয়ার, ফজলুর রহমান, রোকেয়া হায়দার, খবর ডটকম সম্পাদক শিব্বির আহমেদ,  কৌশিক আহমেদ, মিনহাজ আহমেদ, আকবর হায়দার কিরন, নিহার সিদ্দিকী, আবিদ রহমান, দেবাশিস দাস বাবলু ,নিউ ইয়রক বাংলা ডটকমের মশিউর রহমান, ফাহিম রেজা নূর, মিথুন আহমেদ,  মাহবুব শাহ, জলি কর, মনিকা রয়, মাহবুবে খুদা রুমী, জাহেদ শরীফ, ডিজাইনার শাকিল মিয়া,  সারগাম ব্যান্ডের লিটন ও মাসুদ, সংগীত পরিচালক রাজীব রহমান, পার্থ গুপ্ত, রিচার্ড, সুর ও ছন্দের এমদাদুল হক, সবিতা দাস ও অর্ঘ্য সারথী দাস । কবি সোনিয়া কাদির,কবি মিলি সুলতানা,কবি মাকসুদা আহমেদ, কবি জুলি রহমান, লেখক আদনান সৈয়দ, কবি আহমেদ ছহুল,
কবি লিয়াকত আলী, কবি শাহেদ চৌধুরী, কবি কাজী আতিক, কবি ফকির ইলিয়াস,
কবি শামস আল মমীন, ও কবি তমিজ উদদীন লোদী ।

রফিক আজাদ ১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গুণী গ্রামের জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সলিম উদ্দিন খান একজন সমাজসেবক এবং মা রাবেয়া খান ছিলেন আদর্শ গৃহিণী। তিন ভাই-দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তার জন্মের আগে মারা যায় সর্বজ্যেষ্ঠ ভাই মাওলা ও তৎপরবর্তী বোন খুকি। রফিক আজাদ যখন মায়ের গর্ভে তখন তার অকাল প্রয়াত বড় বোন খুকি অনাগত ছোট ভাইয়ের নাম ‘জীবন’ রেখেছিলেন। ‘জীবন’ রফিক আজাদেরই আরেক নাম।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অভিভাবকদের শাসন উপেক্ষা করে তিনি ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রভাতফেরিতে অংশগ্রহণ করেন। চিরদিনই প্রতিবাদী এ কবি তার দ্রোহকে শুধু কবিতার লেখনিতে আবদ্ধ না রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন লড়াইয়ে, জাতির চরম ক্রান্তিকালে, ১৯৭১ এ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সৈনিক হিসেবে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি সম্মুখ সমরে অংশ নিয়েছেন।

রফিক আজাদ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি টাঙ্গাইলের মওলানা মুহম্মদ আলী কলেজের বাংলার লেকচারার ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকীর সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমিতে ‘উত্তরাধিকার’ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন, বিরিশিরি উপজাতীয় কালচালার একাডেমি এবং জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাপ্তাহিক রোববারে সম্পাদক হিসেবেও কাজ করেছেন।

কবি রফিক আজাদ ভাষা ও সাহিত্য কর্মে অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও ২০১৩ সালে রাষ্ট্রীয় একুশে পদক অর্জন করেন। এছাড়া হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৭), কবিতালাপ পুরস্কার (১৯৭৯), আলাওল পুরস্কার (১৯৮১), ব্যাংক পুরস্কার (১৯৮২), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), কবি আহসান হাবীব পুরস্কার (১৯৯১), কবি হাসান হাফিজুর রহমান পুরস্কার (১৯৯৬) এবং ১৯৯৭ সালে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা লাভ করেন।
১৫ মার্চ,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে