প্রবাস ডেস্ক : মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপের স্টেডিয়াম নির্মাণে নিয়োজিত শ্রমিকরা জোর করে আটকে রাখাসহ নানা নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য কাতার স্টেডিয়াম নির্মাণে যে শ্রমিকরা কাজ করছে, তাদের শোষণ করা হচ্ছে। সংকীর্ণ জায়গার মধ্যে শ্রমিকদের বসবাসে বাধ্য করা হচ্ছে। যথাযথ মজুরী দেয়া হচ্ছে না। এমনকি শ্রমিকদের পাসপোর্ট নিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে তারা কাজ ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে না পারে।
কাতারে স্টেডিয়াম নির্মাণে বিদেশী শ্রমিকদের সাথে বাংলাদেশের শ্রমিক যারা কাজ করছেন, তাদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে টেলিফোনে যে কথা বলেছেন, তা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বক্তব্যের সাথে মিলে যায়।
কাতার থেকে বাংলাদেশের ঐ শ্রমিক বলছিলেন, “দিনে কাজের সময় আট ঘণ্টা বলা হলেও আমাদের ডিউটি করতে হচ্ছে বার ঘণ্টা। বেতন পাই মাত্র সাতশ রিয়েল। আর থাকার পরিবেশ খুবই খারাপ। যে রুমে চারজন থাকার কথা, সেই রুমে আমরা বার জন থাকি। খুবই কষ্ট করে কাজ করছি।”
ফুটবল বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে অবকাঠামো নির্মাণে বিদেশী শ্রমিকের চাহিদা যেহেতু রয়েছে, সেটাকে ব্যবহার করে এক শ্রেণির রিক্রুটিং এজেন্সি প্রতারণারও ফাঁদ পাতছে। ভালো কোন কাজ দেয়ার কথা বলে বাংলাদেশের অনেক শ্রমিককে কাতারে নিয়ে গিয়ে সেই কাজ দেয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশের এই শ্রমিকদের কাছ থেকেই মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এমন প্রতারণার শিকার হয়ে গত এক বছরে অনেকেই দেশে ফিরেছেন।
তাদের একজন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া এলাকার মো: সোহেল বলছিলেন, “ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়ামে আমাকে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে কাজ দেয়ার কথা বলে নিয়ে গিয়েছিল। সেজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে তিন লাখ সত্তর হাজার টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ না দিয়ে তিন মাস আমাকে কাতারে বসিয়ে রেখে বলেছিল এখন কাজ নেই। তিন মাস অনেক কষ্টে কাটানোর পর গত ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসি। এখন তারা আমার টাকাও দিচ্ছেনা।”
তবে এসব অভিযোগ মানতে রাজি নয় কাতারে বাংলাদেশের দূতাবাস। কাতার থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ বলেছেন, তাদের দূতাবাস থেকে শ্রমিকদের বিষয় নিয়মিত মনিটর করা হয়।
তিনি আরো বলছিলেন, “অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যে কথা বলেছে, আমাদের দেশের শ্রমিকদের কাছ থেকে সে ধরণের অভিযোগ কখনো পাইনি। শ্রমিকরা যেসব জায়গায় থাকে, আমিও সেগুলো কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। এবং দেখেছি তারা ভালই আছে। বিচ্ছিন্নভাবে ছোটোখাটো দু’একটি অভিযোগ পেলে, তা আমরা সাথে সাথেই কাতার কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা ব্যবস্থা নিয়েছে।”
ঢাকায় কর্মকর্তারাও একই ধরণের বক্তব্য তুলে ধরেন। কাতারে এখন বাংলাদেশের দুই লাখ আশি হাজার শ্রমিক কাজ করছে।-বিবিসি
৩১ মার্চ, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই