শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:২৯:৪১

বিএনপি কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো নিয়ে রহস্য

বিএনপি কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো নিয়ে রহস্য

প্রবাস ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে কোনো সময় ফেরত পাঠানো হতে পারে প্রায় ১৬০ বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীকে। এদের অনেকেই বিএনপির সমর্থক ও নেতাকর্মী। তারা জানিয়েছেন, দেশে ফিরলে তাদের গ্রেপ্তার বা হত্যা করা হতে পারে।

তাদের দাবি, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন এসব জেনেও তাদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। অভিযোগ উঠছে, বাংলাদেশ সরকারকে বেআইনিভাবে ওই কর্মীদের তথ্য সরবরাহ করেছে মার্কিন প্রশাসন। এমনকি বিএনপিকে মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ আখ্যা দেয়ার পেছনেও রহস্য খুঁজে পেয়েছেন অনেকে। এ খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বামধারার নিউজ ওয়েবসাইট দ্য অলটারনেট।

খবরে বলা হয়েছে, অনেককেই সোমবারের মধ্যে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে। ‘দেশিজ রাইসিং আপ অ্যান্ড মুভিং’ (ড্রাম) নামে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সংগঠন থেকে সাবেক বন্দি অভিবাসীরা ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্ট মনোনয়নপ্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটনের সদর দপ্তরে জড়ো হন। তারা এ বিষয়ে হিলারি ক্লিনটনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ড্রাম-এর ডিরেক্টর অব স্ট্রেটজিস রোকসানা মুন বলেন, গণমাধ্যম এখন ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী হুঙ্কারের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। অপরদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টি সমর্থিত নীতির অধীনে ইতিমধ্যেই মুসলিমদের ফেরত পাঠানো চলছে। এ ধরনের ভয়াবহ প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন ও শক্ত পদক্ষেপ নেবেন, এমন নেতৃত্ব চাই আমরা।

খবরে বলা হয়েছে, যাদের ফেরত পাঠানোর কথা রয়েছে, তাদের অনেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সদস্য কিংবা সমর্থক। ২০১৪ সালে ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) বিএনপিকে ‘টায়ার থ্রি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে আখ্যা দেয়। এর অর্থ, এ সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জামিন দেয়ার সম্ভাবনা কম। তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা সঙ্গে সঙ্গেই বাতিল করে দেয়া যাবে।

খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি বৃহত্তম দল বিএনপি। আরেকটি প্রধান রাজনৈতিক দল- ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে দলটির। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, গণহারে বিরোধী কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর কড়াকড়ি আরোপের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি কর্মীদের ওপর অনেক সময়ই সহিংসতা চালানো হয়েছে। আবার বিএনপি সদস্যরাও শান্তিপূর্ণ পন্থায় আন্দোলন করেছেন তা বলা যাবে না। দলটির কর্মীদের বিরুদ্ধে পেট্রলবোমা ও আগুনে বোমা নিক্ষেপের অভিযোগ রয়েছে।
 
জাহেদ আহমেদ (৩১) নামে এক অভিবাসী বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও বিএনপি সমর্থককে তার সামনে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি নিজেও ফোনে হুমকি পেয়েছেন যে, তাকেই এরপর হত্যা করা হবে। তার পিতামাতার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। তার দোকান ভাঙচুর করা হয়। এরপরই তিনি বাংলাদেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে গায়ানা যান তিনি। এরপর পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর আমেরিকার দিকে রওনা দেন। প্রায় ৩ হাজার মাইল তিনি হেঁটে পাড়ি দেন আমেরিকায়। কিন্তু আমেরিকায় পোঁছার পরপর তাকে বন্দি করা হয়। তার আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। জাহেদের দাবি, বিএনপি সমর্থক হওয়ায় তার আশ্রয়ের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। পরে বন্দিত্ব থেকে অবশ্য মুক্তি পেয়েছেন তিনি। এখন আপিলের চেষ্টা করছেন জাহেদ।

বিএনপি সদস্যদের মার্কিন আশ্রয়ের আবেদনের বিষয়টি দেখভাল করার অভিজ্ঞতা রয়েছে অশোক কর্মকার নামে এক আইনজীবীর। তিনি বলেন, তার ওই মক্কেলরাও বাংলাদেশে এ ধরনের সহিংসতার কথা উল্লেখ করেছেন। তাদের মারা হয়, তাদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়, তাদের হত্যার চেষ্টা হয়। বিএনপির নামের সঙ্গে সন্ত্রাসী বিশেষণ শুনলে, তাদের কী মনে হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই আইনজীবী বলেন, ‘তারা ভয় পেয়ে যায়। তারা ভাবে, কীভাবে আমি সন্ত্রাসী হতে পারি?’

ড্রাম, দ্য কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্স, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিগ্রান্টস রাইটস ক্লিনিকসহ ১৬টি প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালের অক্টোবরে ডিএইচএস ও মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষের (আইসিই) কাছে বিএনপি সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। সেখানে বলা হয়, বিএনপির বিরুদ্ধে ডিএইচএসের দাবি পুরোটাই অসমর্থিত অভিযোগ। জেএমবি ও লস্কর-ই-তৈয়বাসহ চরমপন্থিদের সঙ্গে দলটির সম্পর্ক থাকার যে অভিযোগ, তাও অসমর্থিত ও প্রমাণবিহীন।

এ ছাড়া খোদ মার্কিন স্থানীয় আদালত একাধিকবার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নেয়া ডিএইচএসের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে দেশটির ‘বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিল’ যদি একই রায় দেয়, তবে এটি সারা দেশে বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ হবে। এ কথা বলেছেন ন্যাশনাল লইয়ার্স গিল্ডের ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রজেক্ট-এর অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর পারমিতা শাহ।

মানবাধিকার আইনজীবী ও অ্যাডভোকেটরা বলছেন, বিএনপিকে কেন এ ধরনের তকমা দেয়া হলো, তা নিয়ে পরিষ্কার কোনো জবাব নেই। তাদের ধারণা, ডিএইচএস বা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরের কেউ এক্ষেত্রে জড়িত। অনেকে বিভিন্ন সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

নিউ ইয়র্কভিত্তিক একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান মানবাধিকার আইনজীবী চৌমতলি হক বলেন, বিএনপির নামের পাশে যখন ‘টায়ার থ্রি’ তকমা দেয়া হলো, তখন একটি ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন চলছিল। সূত্র : মানবজমিন
৮ এপ্রিল ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে