মিনারা হেলেন : একেকজন ৩৫ লাখ টাকা করে দিয়ে দালালদের মাধ্যমে অবৈধপথে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল বেশকিছু বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে ৩০ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠিয়েছে দেশটির সরকার। এতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করা অবৈধ বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে ওয়াশিংটন থেকে একটি বিমানে করে প্রথম দফায় ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়।
বহিষ্কৃত বাংলাদেশিরা দেশে যাওয়ার আগে অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বারবার সহায়তা চেয়েও তারা কোনো সহায়তা পাননি। দালালদের ধরে জনপ্রতি ৩৫ লাখ টাকা করে অবৈধপথে যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশ করেছিলেন তারা। এ সময় তারা দুঃসহ কষ্টের কথাও তুলে ধরেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জীবিকার খোঁজে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েও শেষ পর্যন্ত স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদেরকে ফিরেই যেতে হলো। এদের অনেকেই এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত সাজাও খেটেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত অভিবাসীরা বলেন, আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা লকডাউন (আটকে) রাখা হয়। খাবারের অবস্থা খুব খারাপ। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য যখন ওরা বদলি করেন, তখন তাদেরকে চেইন (শিকল) দিয়ে দুই হাত, কোমর ও দুই পায় বেঁধে রাখা হয়।
তারা বলেন, এসব জিনিস জীবনে আগে কখনো দেখেননি। এদের অনেকেই কলম্বিয়া-মেক্সিকো হয়ে অবৈধপথে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পর তাদের আটক করে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এভাবে বাংলাদেশি ১৫৯ জনকে জেলে পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বিভিন্ন মেয়াদে সাজা শেষে ৩০ জনকে ফেরত পাঠানো হয় মঙ্গলবার রাতে। বাকি ১২৯ অনুপ্রবেশকারী যুক্তরাষ্ট্রের জেলে আছেন বলেও জানান ভুক্তভোগীরা।
এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ বলেন, ‘বহিষ্কৃত বাংলাদেশিদের ব্যাপারে দূতাবাসে কোনো তথ্য নেই। সাম্প্রতি একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল ঢাকায় গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়কে এ বিষয়ে অবহিত করেছিলেন। তবে ৩০ বাংলাদেশিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।’
এর আগে ৩১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের সফররত স্টেট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালেন বার্সিনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেন। সচিবালয়ে এক বৈঠকে প্রতিনিধি দলটি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে যাওয়া ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়ে এ ব্যাপারে সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রতিনিধি দলটি মন্ত্রীকে জানান, আইনগত সব সহযোগিতা দেয়ার পরও তারা বৈধ অভিবাসী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আদালত তাদের অবৈধ ঘোষণা করেছেন। তাই এসব বাংলাদেশিকে ফেরত নিতে প্রস্তাব দেয়া হয় ওই বৈঠকে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন ওই ৩০ জন প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশি কি না তা নিশ্চিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছিলেন। ওই বৈঠকের মাত্র ৫ দিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে যাওয়া ৩০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হলো।
এদিকে বাংলাদেশে মার্কিন দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগের কর্মকর্তা ভানিসা গোমেজ সাংবাদিকদের জানান, যে ৩০ জনকে ফেরত পাঠানো হয় তাদের মধ্যে নোয়াখালীর ১৩ জন, সিলেটের ৮ জন, মুন্সীগঞ্জের ২ জন, মাদারীপুর, ঢাকার তোপখানা রোড, শ্যামপুর, কেরানীগঞ্জ, কুমিল্লা এবং বরিশালের একজন করে রয়েছেন।
এ ব্যাপারে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) চেয়ারম্যান শাকিরুল ইসলাম জানান, ঢাকার আমেরিকান কন্স্যুল অফিস থেকে তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। রাতে বিমানবন্দরে তাদের সংগঠনের একজন কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আটকদের দেশে ফেরত না পাঠানোর দাবিতে গত ২৯ মার্চ নিউইয়র্কে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রাটিক দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনের নির্বাচনী অফিসের সামনে এ মানববন্ধনে আটক বাংলাদেশিদের বহিষ্কারাদেশ বন্ধের জন্য হিলারির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তেমন কোনো কাজ হয়নি।
উল্লেখ্য, গত তিন বছরে প্রায় দু’হাজার বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে গ্রেপ্তার হন। এর অর্ধেকেরই জামিন হয়েছে। অর্থাৎ তাদের এসাইলামের আবেদন পেন্ডিং রয়েছে। ৬ শতাধিককে বিভিন্ন শর্তে জামিন প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে ১২৯ জনকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। -বাংলামেইল
১৩ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএস