মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু, সিঙ্গাপুর থেকে: গেলো রবিবার আনুমানিক পৌনে বারোটায়, সিঙ্গাপুর সেরান্গুনের রাতে হিরাঝিল রেস্টুরেন্ট এর সামনে চিত্কার করছিলো এক যুবক, কেন? কেউ জানেনা , কেউ চিনে নি তাকে ! কয়েক জন বলছিলেন, বেটাকে পুলিশে দাও , নেশা খোর ,কেউ বলছিলেন না ,মনে হয় পাগল হয়ে গেছে , কেউ বলছে এম্বুলেন্স ডাকো, কেউ বলেছে , অন্য কিছু খাইয়েছে , দুর্গন্ধ নেই ,বমির ভাব নেই ,তার কোন বন্ধু ছিলো না সাথে ,তবে হীরা ঝিলের সামনে আসার আগে ডেসকার রোডে কাউকে সে দৌড়িয়ে ছিলো অনেকেই দেখেছে ,গালি দিচ্ছিলো। পরের ঘটনা অসমাপ্ত ,তথ্য় নেই আর। সকালে ওই স্থানটি ছিলো শুন্য ..................
এ দেশের শ্রমবাজার আক্রান্ত নানা মানব সৃষ্ট ভাইরাসে। যার সাথে জড়িত আমাদের মতো অনেকে, ইসিটিজেন,পি ,আর, শ্রমিকদের মধ্যেই তারা।অবৈধ আইপি ( ভিসা ) হুন্ডি, ক্লাবের মেয়ে সাপ্লাই (বিনোদন ভিসার নামে ), কেউ অবৈধ ভাবে স্ত্রী বানিয়ে নিয়ে এসে ক্লাবে নাচের পুতুল করে। তারা আবার কেইস করে, কেউ কোম্পানি ছেড়ে যায়, সেখানে কেইস ঠুকে দেয় এ দেশের সরকারের বিরুদ্ধে । কেউ স্বল্প আঘাতে কেইস করে। বেশি আঘাত প্রাপ্তরা ইন্সুরেন্স ক্লেম থেকে হয় বঞ্চিত, ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমারের হাতে যাচ্ছে ম্যান পাওয়ার বিজনেসশ্রম বাজার ! নিরাপত্তা জনিত কারণে বন্ধ থাকছে কর্ম স্থল, ছোট হয়ে আসছে শিপ ইয়ার্ডের বাজার,দারুন জগা খিচুরী অবস্থা যখন,তখন সবার উচিত একটু দেখে শুনে চলা।দেশে এখন সিঙ্গাপুর ফেরৎ অনেকেই আসার অপেক্ষায়,পারছে না, আইপি হচ্ছে না, নতুন পাশ করে বসে আছে ট্রেনিং সেন্টার গুলিতে,নতুন ভর্তি হচ্ছে তো হচ্ছেই। শ্রম বাজার টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব যাদের তারা কি করছে নাই বললাম,বহুবার বলা হয়েছে,কে সনে কার কথা। এ নিয়ে কথা বললে আঙ্গুল আসবে আমাদের দিকেই। তাই একটু ধৈর্য্যশীল হলে ক্ষতি কি ?
বিদেশে এসে নোংরা পথ বেছে নেয়া কি খুব জরুরী। যা আমাদের সংস্কৃতির অংশ নয় তাতে গা ভাসিয়ে দেয়া কি আমাদের শোভাদেয়? এ থেকে উত্তরণের পথ কি ? অতি সহজে আমরা আপন করে নেই ক্লাব,মদ জুয়া নারী। নারী মানে হাউস মেইড। দেশী কাজের বুয়া।এই ব্যাপারে আমাদের দেশের শ্রমজীবি কতিপয় বিয়ের বেশ উদার। বাংলাদেশী ছেলেদের যারা গার্ল ফ্রেন্ড থেরাপীতে পারদর্শী তাদের মানবাধিকারের পুরস্কার দেয়া উচিত। তাদের কাছে ছোট জাত বড় জাত এর ভেদাভেদ নেই. কাজের মেয়েদের তারা মনের গহিনে স্থান দেয়.তাদের ব্যাগ নিয়ে হাটে পিছু পিছু। রবিবারে হোটেল একশির বিছানা গরম করে। বাংলাদেশী পোশাক কিনে দেয়। বিদেশে বসে বাঙালি পোশাকে দেখে মনের মানুষ কে? রাতভর ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজিতে কথা বলে। মনে হয় বাংলা জানেই না ! মোবাইলে টপ আপ পাঠায়। গিফট দেয়। যদিও অনেক ছেলের চেয়ে মেয়ের বয়স অনেক বেশি। চেহারা সৃষ্টিকর্তার দান। এ নিয়ে কথা না বলাই ভালো।তবে রিজেক্টেড ম্যাটেরিয়াল বাংলাদেশী শ্রমজীবি লাভার বয়দের ভাগ্যে জোটে বেশি। এখানে গার্ল ফ্রেন্ড হস্তান্তরের ব্যবস্থা ও আছে! এক জন আরেক জনকে দিয়ে যায়, দেশে যাবার সময়। কত উদার মন মানসিকতার ভাবা যায়! আবার কয়েক জন জুতার বাড়িও খায় , কর্ম স্থলে মেয়েরা এসে লাথি, চড় থাপ্পড় দিয়ে যায়, করণ আজকাল দেশী বয়েজ রা গার্ল ফ্রেন্ড বদলায়। ছেলে আবার আপোষ করে।
অনেক শ্রমজীবি ছেলেদের পাশাপাশি কাজের মেয়েরাও আজকাল সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চা করছে। বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশী প্রতিভাবান কবিদের সাথে ইন্দোনেশিয়ান, ফিলিপিন, মায়ানমার, চাইনিজ হাউস মেইড কবিদের একটা টাই আপ হচ্ছে। তাদের মধ্যে সাহিত্যের লেনদেন এর পাশাপাশি বন্ধ্যুত্ব জোরদার হচ্ছে। এক সাথে নৌকা বাইচ, ফুটবল খেলা ,মন লেনা দেনায় রচিত হচ্ছে প্রেমের নয়া কাব্য।
কোন অংশে পিছিয়ে নেই রেমিটেন্স কারিগর গণ। শুধু হাতে গোনা কিছু শ্রমিক দেশের খরচ তুলতে পারছে। বেশির ভাগ ফিরছে শুন্য হাতে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে। এর মাঝে কিছু লাভার বয় খেলছেন প্যাকেজ প্রেমের ইনিংস। ভাংছে অনেকের সুখের সংসার। কত পরিশ্রমী ছেলেরা টাকা তুলতে না পেরে কেঁদে ভাসায় বুক.কেউ ক্লাবে নৃত্যের তালে মদিরার মাঝে খুঁজে সুখ, অনেকেই এখানে জড়িয়ে যায় অবৈধ সিগারেট ব্যবসায়,নাম কা ওয়াস্তে হয় গ্যাং ষ্টার , ক্লাবে মারা মারি , আই পির টাকা উদ্ধারের মধ্যস্থা কারী, কেউ আবার পুলিশের ইনফর্মার।
সুন্দর একটা দেশে নিয়ম কানুনের দেশে, কি করে অপরাধ করে বেড়ায় কতিপয় লোক! আর কেউ ভাবে কিভাবে খরচ হয়ে যাওয়া আট থেকে এগার লক্ষ টাকা উঠানো যাবে,প্রয়োজনে চব্বিশ ঘন্টাও কাজ করতে প্রস্তুত।ম্যান ইয়ার সংকটে, এই লেখা লেখার সময় তিন জনের রিনিউ হয়নি ,অফিস থেকে কল এলো মনির,মাকসুদ,মিরাজুল এর কার্ড পাঠাতে।দু একদিনের মধ্যে মাত্র এগারো মাসে ফেরৎ যাচ্ছে দেশে।কি হবে তাদের কেউ জানে না !
১৮ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এইচএস/কেএস