রোকনুজ্জামান পিয়াস : সংযুক্ত আরব-আমিরাত, সৌদি আরব ও কুয়েতের বিভিন্ন জেলে নানা অপরাধে বন্দি রয়েছেন ১৪৭৭ জন বাংলাদেশি। এরমধ্যে শুধু আরব আমিরাতের ৬টি জেলেই বন্দি রয়েছে ৯৩৬ জন। এ ছাড়া ২৮০ জন বন্দি রয়েছে সৌদি আরবের ১৪টি জেলে। কুয়েতের সেন্ট্রাল জেলে বন্দি আছেন ২৬১ বাংলাদেশি। এই তিন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশি দূতাবাস সূত্রে বন্দিদের এসব তথ্য জানা গেছে।
তাদেরকে মুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলেও দূতাবাসগুলো উল্লেখ করেছে। বিশেজ্ঞরা মনে করেন সরাসরি না হলেও জনশক্তি প্রেরণে পরোক্ষভাবে প্রবাসীদের অপরাধ প্রবণতা প্রভাব ফেলতে পারে।
সৌদি আরবের জেদ্দাস্থ বাংলাদেশি দূতাবাসের দেয়া তথ্যমতে, দেশটির ১৪টি জেলে আটক রয়েছে ২৮০ জন। এরমধ্যে জেদ্দার ব্রিমান জেলখানায় ১২১ জন, মক্কার কেন্দ্রীয় জেলখানায় ৪৫ জন মদিনার কেন্দ্রীয় জেলখানায় ২৫ জন, আবহার কেন্দ্রীয় জেলখানায় ৩ জন, খামিসের কেন্দ্রীয় জেলখানায় ১৪ জন, জাহরান আল জুনুব কেন্দ্রীয় জেলখানায় ১ জন আল বাহা কেন্দ্রীয় জেলখানায় ২ জন, ইয়ানুব কেন্দ্রীয় জেলখানায় ৬ জন, তায়েফের কেন্দ্রীয় জেলখানায় ১৫ জন, নাজরানা কেন্দ্রীয় জেলে ১৫ জন, তাবুক কেন্দ্রীয় জেলখানায় ১৫ জন, জিজান কেন্দ্রীয় জেলে ১৩ জন বিশা কেন্দ্রীয় জেলে ২ জন এবং কুনফুদা কেন্দ্রীয় জেলখানায় ৫ জন বাংলাদেশি আটক রয়েছে।
এসব বাংলাদেশিদের কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করছেন, আবার কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। কারাগারে আটক এসব বাংলাদেশিরা সেদেশে হত্যা, পাসপোর্ট/ইকামা জালিয়াতি, চারিত্রিক স্খলন, মানি লন্ডারিং, জুয়া খেলা, দুর্নীতি, চুরি, ডাকাতি, ঝগড়া, মারামারি, ড্রাগ/নেশাদ্রব্য বহন ও সেবন, ঘুষ প্রদান, অবৈধ ইন্টারনেট ফোন ব্যবসা, বৈধ অবস্থান, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন ইত্যাদি নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
আটককৃত এসব বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে দূতাবাস তাদের সহযোগিতার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে। তারা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তাদের আটকের কারণ, অপরাধের বিবরণ, আটকের মেয়াদ বিচারাধীন মামলার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে।
প্রয়োজনে কফিল বা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ, মামলার শুনানিতে আইনি ও অনুবাদ সহায়তা প্রদান করে থাকে। জেল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় আটক অসুস্থ কর্মীদের চিকিৎসাসেবা ও জেল কোড অনুযায়ী প্রাপ্য অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত করা হয় বলে দূতাবাস সূত্রে জানা যায়।
পবিত্র রমজান মাসে ও বিভিন্ন উপলক্ষে বিভিন্ন অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের সাজা অনেক ক্ষেত্রে মাফ করে তাদের মুক্তি দেয় সৌদি সরকার। বাংলাদেশ দূতাবাস এ প্রক্রিয়াতে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশিদের মুক্ত করার চেষ্টা করে থাকে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কনস্যুলেট জেনারেল অব বাংলাদেশের শ্রম উইং সূত্রে জানা গেছে, হত্যা, মাদক, নারীপাচার, অপহরণ, চুরি, ব্যভিচার, অবৈধ অবস্থান, অর্থ জালিয়াতিসহ নানা অপরাধে দেশটির দুবাই ও উত্তর আমিরাতের ৬টি জেলে বন্দি রয়েছে ৯৩৬ বাংলাদেশি।
এরমধ্যে দুবাই জেলখানাতেই রয়েছে ৬৩৮ জন। এ ছাড়া শারজাহ জেলে ১৬৮ জন, আজমান জেলে ৫৯ জন, উম্মুল কুওয়াইন জেলে ৯ জন, রাস আল খাইমাহ জেলে ৪২ জন এবং ফুজাইরাহ জেলে ২০ জন আটক রয়েছেন।
দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, দেশটির বিভিন্ন জেলে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এসব আসামিদের মুক্ত বা সাজা মওকুফের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সমঝোতার উদ্যোগ নিয়ে ক্ষমাপত্র সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করছে।
এ ছাড়া গত ২০১৪ সালের ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দেশটির সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ফলে বাংলাদেশিদের মুক্তির বিষয়টি সহজ হবে বলেও আশা প্রকাশ করা হয়।
অন্যদিকে কুয়েতে খুনের মামলা, ধর্ষণের মামলা, গাঁজা, হেরোইন ও মদ বিক্রির মামলা, ছিনতাইয়ের মামলা, জেনার মামলা, চোরাচালানের মামলা, পাসপোর্ট জালিয়াতির মামলা ও অপহরণের মামলার কারণে কোর্টের রায়ের পর বিভিন্ন মেয়াদে ২৬১ বাংলাদেশি কারাভোগ করছেন। এরা সবাই কুয়েতের সেন্ট্রাল জেলে আটক রয়েছেন। দূতাবাস তাদের আইনি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিবাসী কর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকুপ) এর চেয়ারম্যান সাকিরুল ইসলাম বলেন, এসব ক্রাইমের কারণে সরাসরি প্রভাব না পড়লেও পরোক্ষভাবে প্রভাব পড়ে। তিনি বলেন, এর আগে তো সৌদি আরবে বেশ ভালোই আমাদের একটা বদনাম ছিল।
তিনি লেবাননের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে দেখা যায় বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অনেকেই পালিয়ে যান। ফলে সেখানে প্রভাব পড়তে পারে। কারণ নিয়োগকর্তারা সেখানে টাকা খরচ করে নিয়ে যায়। ফলে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তারা কর্মী নেয়ার ব্যাপারে চিন্তা করবে। -এমজমিন
১৮ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম