আহমাদুল কবির: ভাগ্য ফেরানোর নেশায়, দালালদের প্রলোভনে সচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশের অনেক যুবক লুফে নেন স্বল্প খরচে মালয়েশিয়া যাওয়ার সুযোগ। তবে মালয়েশিয়া-যাত্রা শুরুর আগে ঘুনাক্ষরেও তারা উপলব্ধি করতে পারেন না, কী আছে সামনে। ভাগ্য বদলের নেশায় তারা বিভোর তখন।
সোনার হরিণ হাতে পেতে মালয়েশিয়া-যাত্রা শুরুর পরপরই খুলতে থাকে তাদের চোখ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুর্গম সাগরপথে ক্ষুধা, তৃষ্ণা, অবর্ণনীয় অত্যাচারে হঠাৎ চোখ খুলে যাওয়া এই যুবকদের সামনে তখন না আছে সামনে যাওয়ার পথ, না আছে পেছনে ফেরার পথ। সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার আশায় থাইল্যান্ডের জঙ্গল আর মালয়েশিয়ায় বন্দিজীবন কাটিয়ে এভাবে মালয়েশিয়া যুবকদের ২১ জন শুক্রবার ফিরছেন বাংলাদেশে। ফেরার সময় তাদের ঝুলিতে থাকছে কেবল মালয়েশিয়া-জীবনের দুঃসহ স্মৃতি। জহুর প্রদেশ বাংলাদেশ কমিউনিটির অর্থায়নে দেশে ফিরছেন তারা।
কারাভোগের পর যারা অর্থের অভাবে দেশে ফিরতে পারছিলেন না, তাদের দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নেন কমিউনিটির নেতারা। বৃহস্পতিবার জহুর বারু পিকেনানাস শিবিরে ওই বন্দিদের হাতে বিমান টিকেট হস্তান্তর করা হবে। পিকেনানাস বন্দিশিবিরের মো. কামাল হোসাইন জানিয়েছেন সাগরপথে তার ভয়াবহ সেই যাত্রার কথা, জীবন বাজি রেখে দুর্গম সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে পাচারকারীদের মারপিটের কথা। কামালের কথায় উঠে এসেছে কীভাবে তারা একমুঠো চাল আর এক মগ পানি খেয়ে পৌঁছেছেন মালয়েশিয়া।
কামাল জানিয়েছেন, ভাগ্য বদলের আশায় এভাবে মালয়েশিয়া গিয়ে কিছুদিন কাজ করার পরই তিনি ধরা পড়েন মালয়েশিয়া পুলিশের হাতে। শুরু হয় কারাবাস। কামালের অভিযোগ, বন্দিশিবিরে প্রায়ই বাংলাদেশিদের ওপর নির্যাতন করা হয়। ক্যাম্পে অনেকে মারাও যান। সেখানে ঠিকমতো খাবার দেয়া হয় না। দীর্ঘদিন বন্দিশিবিরে থাকলেও হাই-কমিশনের পক্ষ থেকে তাদের দেশে ফেরত নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। জহুর কমিউনিটি বদৌলতে সেই দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা শুনে কমিউনিটির জন্য দু’হাত তুলে দোয়া করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন কামাল।
মালয়েশিয়ার সিমুনিয়া, লেঙ্গিং, লাঙ্গ, জুরুত, তানাহ মেরা, মাচাপ উম্বু, পিকে নানাস, আজিল, কেএলআইএ, সেপাং, বুকিত জলিল ও পুত্রজায়া বন্দিশিবিরে কামালের মতো কতজন বাংলাদেশি আটক রয়েছেন, তার সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, ১২ থেকে ১৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি বন্দি রয়েছেন। এই বন্দিরা মালয়েশিয়ার অভিবাসন আইন, ১৯৫৯-এর ধারা ৬(১) সি/১৫ (১) সি এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯৬৬-এর ১২(১) ধারায় কারাভোগ করেছেন।
জহুর কমিউনিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম রবিন, সহ-সভাপতি মো. ফাহিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলাম আমিন, দফতর সম্পাদক শামিম এজাজ জানান, জহুর কমিউনিটি প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। জহুর কমিউনিটির সাধারণ সম্পাদক এমজে আলম বলেন, ‘মানবপাচার শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও হচ্ছে। কতটা নিরাপত্তার মধ্যে তারা যাচ্ছে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যেই দেশ থেকে যাচ্ছে সেই দেশগুলোর বা এর সরকার থেকে শুরু করে সকলের।’
শুক্রবার প্রথম দফায় ২১ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানোর পর পরবর্তীতে কমিউনিটির পক্ষ থেকে আরো ৮০ জনকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন আলম।-জাগোনিউজ
১৯ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ