বুধবার, ০৮ জুন, ২০১৬, ০১:৩০:৪৬

যেকারণে ৫০০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে জার্মানি

যেকারণে ৫০০ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে জার্মানি

মিজানুর রহমান : প্রায় ৫০০ বাংলাদেশিকে ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে জার্মান সরকার। বৈধতার আইনি লড়াইয়ে তারা হেরে গেছেন বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের মধ্যেই তাদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে চায় বার্লিন। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে।

প্রতিনিয়ত বিষয়টি নিয়ে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে জার্মানি। ঢাকার তরফে অবশ্য তাদের গ্রহণে অস্বীকৃতি জানানো হয়নি। তবে তালিকাভুক্তদের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হতে কিছুটা সময় চাওয়া হয়েছে। একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে এই তথ্য মিলেছে। সূত্র মতে, অবৈধ অভিবাসী প্রশ্নে জার্মানিসহ ইইউভুক্ত দেশগুলো বেশ কয়েক বছর ধরে সরব। ওই জোটে থাকা ২৮ রাষ্ট্রের প্রত্যেকে একক এবং জোটগতভাবে অবৈধদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

জার্মানিতে প্রায় ৫০০ বাংলাদেশির বৈধতার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বিধায় তাদের অবিলম্বে ওই ভূখণ্ড ছাড়তে হবে জানিয়ে বার্লিনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে একটি কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। গত মাসে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী সরকার বরাবর পাঠানো ওই পত্রে উল্লিখিত অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া দ্রুততর করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গত ২৫শে এপ্রিল বার্লিনে স্টেট সেক্রেটারি লেভেল বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।

বলা হয়েছে- এ নিয়ে পররাষ্ট্র সচিবের অঙ্গীকারে বার্লিন খুবই খুশি। কূটনৈতিক পত্রের শুরুতে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ‘ফলপ্রসূ’ বৈঠক এবং সেই সময়ে রাষ্ট্রদূতের বাসায় আয়োজিত ডিনারের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়। সেখানে চলতি বছরজুড়ে বাংলাদেশের সভাপতিত্বে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা জিএফএমডি’র যেসব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে তাতে জার্মানির ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। পত্রে বলা হয়, অবৈধ অভিবাসনের সঙ্গে বৈধ অভিবাসন সরাসরি যুক্ত।

জার্মানি ছাড়তে বাধ্য এমন ৫০০ অবৈধ বাংলাদেশির বিষয়ে (কেস) পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তাদের বিষয়টি অনেক দিন ধরে ঝুলে আছে। সচিব তাদের নাগরিকত্ব যাচাই বাছাই (ভেরিফিকেশন)’র প্রক্রিয়া শেষ করার অঙ্গীকার করেছেন। জার্মানি চায় বিষয়টি চলতি বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে। পত্রে বছর শেষ হওয়ার আগে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে এর সহায়ক একটি ম্যাকানিজমের প্রস্তাব করে জার্মানি।

বিষয়টি নিয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বলা হয়, সেখানে যে পরামর্শ এসেছে তা হলো জার্মানিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কনস্যুলার সেকশনের কর্মকর্তারা তালিকাভুক্ত অবৈধ বাংলাদেশিদের নিয়মিতভাবে সাক্ষাৎকার নিতে পারেন। বিয়েলফেল্ড ফরেনার্স অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই সাক্ষাৎকার নেয়া যেতে পারে।

সেখানে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে যারা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হবেন তাদের দেশে ফেরার জন্য দূতাবাসের কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করতে পারেন। সাক্ষাৎকারেও যাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে না বা সন্দেহ হবে তাদের বিষয়টি ঢাকার বিবেচনায় পাঠানো হবে। সাক্ষাৎকার গ্রহণের পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে ঢাকা ওই কেসগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রিপোর্ট দিবে।

জার্মানির সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনার বিষয়টি জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক বুধবার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জোটের বিভিন্ন দেশে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। নাগরিকত্ব নিশ্চিত হলেই তাদের ফেরত আনা হবে। একই সঙ্গে বৈধভাবে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশি প্রেরণের জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, এ বিষয়ে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে। যার একটি বৈঠক ঢাকায় হয়েছে, পরবর্তী বৈঠক ব্রাসেলসে হবে। -মানবজমিন
৮ জুন ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে