মিজানুর রহমান: অবৈধ হয়ে পড়া প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে লেবানন। এদের প্রায় ৮০ ভাগ নারী। বৈরুতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে ওই প্রবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে। প্রাথমিকভাবে মামলা-মোকদ্দমা থেকে ‘দায়মুক্তি’ দিয়ে ৩৫০ জনকে দেশে ফেরার অনুমতি দিয়েছে অবৈধ বিদেশি শ্রমিকদের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ জেনারেল সিকিউরিটি অব লেবানন। পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বৈরুতস্থ বাংলাদশ দূতাবাসের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র মতে, বিভিন্ন সময়ে লেবাননে যাওয়া প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশি বর্তমানে দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ব্রোকার বা দালালদের খপ্পরে পড়ে মূল স্পন্সর বা নিয়োগকর্তা থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। ‘পলাতক’ দেখিয়ে ওই বাংলাদেশিদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নিয়োগকর্তারা মামলা করেছেন। মামলা চলমান থাকায় তাদের দেশটি ত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ‘পলাতক’ ওই বাংলাদেশিদের নেই কোনো পাসপোর্ট বা বৈধ ডকুমেন্ট।
তারা দেশটির বিভিন্ন স্থানে অল্প-বিস্তর কাজ কর্ম করে কোনোমতে দিনযাপন করছেন। বিপাকে থাকা ওই অবৈধ বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা দেশে ফিরতে চান- তাদের একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয় বৈরুতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। আগ্রহীদের নাম তালিকাভুক্তির একটি নোটিশ জারি করা হয়। কয়েক মাসে দূতাবাসে ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে নিবন্ধন করেন। সেই তালিকা যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি লেবানন সরকারের বিবেচনায় উপস্থাপন করে। একই সঙ্গে দেশে ফিরতে আগ্রহীদের মামলা মোকদ্দমা থেকে ‘দায়মুক্তি’র ব্যবস্থা করতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের প্রতি অনুরোধ জানান রাষ্ট্রদূত আবু মোতালেব সরকার। ঢাকায় প্রাপ্ত রিপোর্ট মতে, লেবানন সরকার ও দেশটির রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী ও পার্লামেন্ট স্পিকার। তাদের উভয়ের হস্তক্ষেপে অবৈধ বাংলাদেশিদের দায়মুক্তি দিতে রাজি হয় লেবাননের সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ।
প্রথম ধাপে ৩ হাজারের অধিক বাংলাদেশির ওই তালিকার ৩৫০ জনকে ক্লিয়ারেন্স (ছাড়পত্র) দেয় সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ। ছাড়পত্র পাওয়া ওই বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩০০ জনকে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দূতাবাস জানিয়েছে ঈদের আগে তাদের ছোট ছোট দলে বিভিন্ন বিমানে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪০ জনের টিকেট বুকিং দেয়া হয়েছে এয়ার আরাবিয়ায়। আগামী শুক্রবার এক বা একাধিক গ্রুপে তাদের ঢাকাগামী ফ্লাইটে তুলে দেয়া হবে। দীর্ঘ ওই প্রক্রিয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রদূত আবু মোতালেব সরকারের তিনি জানান, এক সময় বাংলাদেশি শ্রমিকদের অকর্ষণীয় গন্তব্যের অন্যতম ছিল বৈরুত। দেশটিতে গড়ে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন বহু বছর ধরে। মূলত গৃহকর্মী হিসেবেই বেশির ভাগ বাংলাদেশি কাজ করেন। এটি তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধও করেন। লেবাননের নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশিদের পছন্দ ও বিশ্বাস করেন। বেতন-ভাতা, ছুটিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেশ ভালোই ছিল।
কিন্তু গত কয়েক বছরে ওই দেশের এবং বাংলাদেশি কিছু ব্রোকার বা দালাল চক্র সেটি নষ্ট করে ফেলেছে। তারা বাংলাদশ থেকে এক নিয়োগকর্তার জন্য লোক নিয়ে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিয়ে সেই বিশ্বাসে চিড় ধরিয়েছে। এছাড়া দালালচক্র নিজেদের স্বার্থের জন্য কিছু নারী শ্রমিককে নিয়ে ভিন্ন পথে ছেড়ে দিয়েছে। সব মিলে সেখানে এখন বাংলাদেশিরা নানামুখী সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন। তারপরও দেশটিতে বৈধ-অবৈধ মিলে এখনও প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, সেখানে প্রায় ২০ হাজারের মতো অবৈধ হয়ে পড়েছেন। তাদের প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নিয়োগকর্তার মামলা রয়েছে। এদের হাতে বৈধ কোনো ডকুমেন্ট নেই জানিয়ে তিনি বলেন, দেশটির কর্তৃপক্ষ ক্লিয়ারেন্স না দিলে এরা দেশেও ফিরতে পারবে না।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে। নিরাপদ এবং অবৈধ অভিবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ও বিদেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর অবৈধ হয়ে পড়া ওইসব বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে দেশে ফেরানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বৈধকরণের প্রক্রিয়া নিয়েও কূটনৈতিক তৎপরতা চলমান রয়েছে। লেবাননে থাকা ওই বাংলাদেশিদের বৈধকরণের কোনো চেষ্টা করা হয়েছিল কি-না জানাতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস উভয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ওই বাংলাদেশি বৈধকরণের কোনো সুযোগ ছিল না বলে দাবি করেন।-এমজমিন
২৩ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ