মতিউর রহমান চৌধুরী: ভোটের ময়নাতদন্ত চলছে। টিভিতে। বাড়িতে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। সুপার মার্কেটে। এমনকি বাসে-ট্রেনেও। কি হলো? এটা কি ভুল হয়ে গেলো? এক দল বলছেন, আমরা স্বাধীন হয়েছি এটাই বড় কথা। সাময়িক কষ্ট হবে, দ্রুত সেরে উঠবো আমরা। অন্যপক্ষ বলছেন, কি প্রতিক্রিয়া হবে তা আগাম বলেননি রাজনীতিকরা। শুধু স্বপ্নই দেখিয়েছেন। কিছুটা আবেগ আর রাগ কাজ করেছিল। ইউরোপীয় ন্যাশন হলেই হলো। যে কেউ এসে গেলো। হাসপাতালে ওদের জন্য লম্বা সময় করে বসতে হয়। ডাক্তাররা রীতিমতো হিমশিম খান। বাড়িঘর সংকট। ওদের জন্য বাড়ি ফ্রি। রাষ্ট্র টাকা যোগায়। বৃটিশ ঐতিহ্য তো আছেই। বয়স্ক যারা এসব তাদের বড়ই অপছন্দ। অন্যরা এসে ভাগ বসাবে তা মানবো কেন। ভাষা জানে না। ম্যানার জানে না। ওরা পেয়ে যাচ্ছে সিংহভাগ সুযোগ-সুবিধা। রাষ্ট্র কেন এটা মেনে নেবে। মানুষের এই আবেগকে লুফে নিয়েছিলেন রাজনীতিকরা। উস্কে দিয়েছিলেন আবেগ। যদিও তরুণরা এর বিরোধিতা করেছিল। তাদের কথা, আমরা ভালো লেখাপড়া করে ইউরোপের অন্য দেশে ভালো চাকরি-বাকরি পাচ্ছিলাম, এটা তো বন্ধ হয়ে যাবে।
তরুণরা কিন্তু ইইউতে থাকার পক্ষে সায় দিয়েছে। কিন্তু ঘটনা তো ঘটে গেছে। মানুষ কথা বলেছে। বিভক্ত হয়েছে জাতি। এটা তো পরিষ্কার, গণতন্ত্রে এর কোনো বিকল্প নেই। জনমতকে উপেক্ষা করা চলে না। এটা বৃটিশ গণতন্ত্র। প্রধানমন্ত্রী কোনো দাবি ওঠার আগেই ইস্তফা দিয়ে চলে গেছেন। ইতিহাসে হয়তো ডেভিড ক্যামেরনের নাম অন্যভাবে লেখা হবে। ক্যামেরনের সবচেয়ে প্রিয় হচ্ছে মিডিয়া। কাল সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন ঠিকই কিন্তু মিডিয়ার মুখোমুখি হলেন না। চেহারায় ছিল ক্লান্তির ছাপ। প্রশ্ন উঠেছিল কোনো সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেয় কিনা। রানী ইতোমধ্যেই ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি।
চার দশক ভালোবাসা আর ঘৃণা ছিল ইইউ প্রশ্নে। জনগণ মনে করতো তারা ইইউতে গিয়ে ভুল করেছে। বৃটিশ ঐতিহ্যের সঙ্গে আপস করেছে। ডেভিড ক্যামেরনের সামনে এটা ছিল বড় এক চ্যালেঞ্জ। দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হওয়ার পর কবুল করেন এই প্রশ্নে গণভোট দেবেন। তিনি হয়তো জানতেন না এতে তার গদি টলটলায়মান হবে। এখন বলাবলি হচ্ছে, গণভোট হয়তোবা পরিহার করা যেতো। নিজ দলের মধ্য থেকে চ্যালেঞ্জ আসবে ক্যামেরন তা ভাবতে পারেননি। বরিস জনসন আর মাইকেল গোভ তার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। বিশ্ব তাকিয়ে ছিল। গণভোটের ফল দেখে মনে হচ্ছে এক ভূমিকম্প হয়ে গেছে। কেউ খুশি নন। খুশি শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃটেন স্বাধীনতা পেয়েছে-তার এমন মন্তব্য নানাভাবে আলোচিত হয়েছে। তার ধারণা মার্কিন জনগণও এ ধরনের এক বিপ্লবে শামিল হবে। অবাক এই বিশ্বে কতো কিছুই না ঘটে।
বৃটেনের সঙ্গে চার দশক যারা একসঙ্গে ছিলেন সেই ইউরোপীয় নেতারা বলছেন, আর অপেক্ষা কেন? তালাক যখন হবেই তখন দু’বছর বাদে কেন? গণভোট বৃটেনের পরিচিতি বদলে দিতে পারে। স্কটল্যান্ড হাত জাগিয়েছে। বলছে ফের গণভোট চাই। ২০১৪-তে তারা হেরে গিয়েছিল। তারা ইইউতে থাকার পক্ষে ভোট দিলো। ইংল্যান্ড তার বিপরীতে। ভাষ্যকাররা বলছেন, এর মূল্য হয়তো দিতে হতে পারে। আবার অন্যদিকে অনেকে বলছেন, ইংলিশ জাতি যারা তামাম দুনিয়া শাসন করেছে একসময় তারা কোনো একটা উপায় খুঁজে বের করবেই। তারা বৃটেনকে ধ্বংস হতে দেবে না। অক্টোবরে ক্যামেরনের পর নতুন নেতৃত্ব কিভাবে হাল ধরবে। তারা কি অর্থনীতিকে মূল ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে।
ইউরোপের অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করাটাও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। স্পেনের কাছে জিব্রাল্টার বৃটিশ নিয়ন্ত্রণেই ছিল। ২৪ হাজার ভোটার সেখানে। স্পেন এর অন্যতম দাবিদার। এ নিয়ে কূটনৈতিক তর্ক লেগেই আছে। ভোটের পর স্পেন বলছে এটা তাদের। যদিও এর আগে গণভোটে জিব্রাল্টারের লোকজন শতকরা একশভাগ বৃটেনের সঙ্গে থাকতে চেয়েছিল। ব্রেক্সিট বৃটিশ জনগণের সিদ্ধান্ত। কিন্তু বিশ্বের জন্য কষ্টের এতে কোনো সন্দেহ নেই। দীর্ঘদিন থেকে ইউরোপজুড়ে দক্ষিণপন্থি দলগুলো সরব নানা কারণে। যদিও তাদের অবস্থান ছিল নড়বড়ে। ব্রেক্সিট তাদের হাতে এনে দিয়েছে এক তুরুপের তাস। দেখা যাক না কি দাঁড়ায় শেষতক।-এমজমিন
২৬ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ