শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৫:০২:৩৩

২০ বছর পর স্বামী-স্ত্রীর দেখা, পদদলিত হয়ে স্ত্রীর মৃত্যৃু

২০ বছর পর স্বামী-স্ত্রীর দেখা, পদদলিত হয়ে স্ত্রীর মৃত্যৃু

প্রবাস ডেস্ক : ২০ বছর পর হজে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর দেখা।  দেখার পর স্ত্রী বলেছিল আর কোনোদিন তাকে ফেলে চলে যাবেন না।  বৃহস্পতিবার মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে মারা যান স্ত্রী।  সত্যিই কি নির্মম ঘটনা।  

চোখের পানি কি ধরে রাখা যায়?  পৃথিবীতে এমন ঘটনা খুবই কম ঘটে, যা মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়।  মৃত ওই হাজীর স্বামী মোহাম্মাদ বেলাল মিনার আল-জিসর হাসপাতালের বারান্দায় বসে আছেন শেষবারের মতো স্ত্রীকে দেখার জন্য আক্ষেপ করছেন।

মোহাম্মাদ বেলাল বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে, তিনি তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন, যেখানে ২০ বছর পর তাদের দেখা হয়েছিল এই হজে।
দু’চোখ দিয়ে ঝরছিল পানি।  কণ্ঠ যে তার জড়িয়ে আসছে।  এরপরও বাংলাদেশি অন্য হাজীদের বেলাল বলছেন, কেউ তার স্ত্রীকে দেখেছেন কিনা। তিনি জানেন যে, তার স্ত্রী চলে গেছেন না ফেরার দেশে।  আর কোনোদিন দেখা হবে না তার সাথে।

তার স্ত্রী প্রতিজ্ঞা করেছিল, আর কোনো দিন তাকে ছেড়ে যাবে না, সব সময় পাশেই থাকবে।  দেশটির সংবাদমাধ্যম আল-হায়াত পত্রিকাকে কথাগুলো বলছিলেন বেলাল।

প্রসঙ্গত, ২৫ বছর আগে সৌদি আরব যান বেলাল।  সেখানকার ধাহারন আল-জানুব শহরের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন তিনি।  বেলাল বলেন, তিনি তার স্ত্রীর হজের জন্য ২০ বছর ধরে টাকা জমাচ্ছিলেন।  দীর্ঘদিন ধরে আমি তার কাছ থেকে দূরে রয়েছি।  তার সাথে দেখা হলো, কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমি তাকে হারালাম।

বেলালের বন্ধু আব্দুল আলিম তাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছেন।  কান্নার ফাঁকে অন্যদের জিজ্ঞাসা করেন, কেউ তার স্ত্রীকে দেখেছেন কিনা।  এর পরপরই তিনি বুঝতে পারেন, তার স্ত্রী যে আর নেই।  তিনি চলে গেছেন পরপারে।  

তার স্ত্রী হজে আসতে পারায় তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন।  আমার স্ত্রী তিন সন্তানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন।  সে বুঝতে পারছিল হয়তো সে আর ফিরবে না।

সকাল সাড়ে ৭টার (বৃহস্পতিবার) দিকে তারা (স্বামী-স্ত্রী) একইসঙ্গে জামারতে পাথর নিক্ষেপ করে ফিরছিলেন।  আমার স্ত্রী ভিড়ের মাঝে নিচে পড়ে গেলে আমি চিৎকার করে কাঁদছিলাম।  

আমার স্ত্রীকে বাঁচান।  কিন্তু কেউ আমার কথা শুনেননি। প্রত্যেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ব্যস্ত।  আমি আমার স্ত্রীকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু লাশের স্তূপ থেকে তাকে তুলে আনা সম্ভব হয়নি।  আমি দেখেছি, তার বিস্তৃত চোখ দুটো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।  

বিলাল বলেন, এখন আমার একটাই সান্ত্বনা, আমার স্ত্রী সবচেয়ে পবিত্র স্থানে সমাহিত হবে।  সে সৃষ্টিকর্তার কাছে একজন শহীদ হিসেবে সাক্ষাৎ করবে।

২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে