প্রবাস ডেস্ক : বহুল আলোচিত সিলেটে নির্মম হত্যার শিকার ১৩ বছরের শিশু শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলার মূল হত্যা কামরুল ইসলামকে বাংলাদেশে ফেরত দিতে রাজকীয় ফরমান জারি করেছে সৌদি আরব।
গত সপ্তাহে এ ফরমান জারি করা হলেও সৌদি গণমাধ্যম আরব নিউজ বুধবার তাদের অনলাইন সংস্করণে বিষয়টি জানায়।
কামরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোল রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে চারদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন উদ্বোধন শেষে ঘাতক কামরুল ইসলামকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, সৌদি রাজকীয় আদালত কামরুলকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টির অনুমোদন দিয়েছে; ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে ইন্টারপোলের সৌদি অংশকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কাগজপত্রসংক্রান্ত অতিরিক্ত যেসব কাজ রয়েছে, সেগুলো শেষ হতে দুই সপ্তাহের বেশি লাগার কথা নয়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর শেখ সামিউল আলম রাজন হত্যা মামলা বিচারের জন্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করেন সিলেটের প্রথম মহানগর হাকিম সাহেদুল। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৬ সেপ্টেম্বর।
গত ৩১ আগস্ট সৌদি আরবে আটক রাজনের প্রধান হত্যাকারী কামরুল ইসলাম, তার ভাই পাভেল ও শামীমকে আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৪ আগস্ট রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র আমলে নেন আদালত। একই সাথে অভিযুক্ত তিন পলাতক আসামি কামরুল ইসলাম, তার ভাই শামীম আহমদ ও পাভেলকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
পাশাপাশি ওই দিন তাদের মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দেয়া হয়। তাদের মধ্যে কামরুলকে সৌদি আরবে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন প্রবাসীরা।
গত ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে কামরুল, তার ভাই শামীম আহমদ ও পাভেলকে পলাতক দেখানো হয়। এছাড়া বাকি অভিযুক্তরা হলেন কামরুলের ভাই আলী হায়দার, মুহিত আলম, ময়না চৌকিদার, রুহুল আমিন, তাজউদ্দিন আহমদ বাদল, দুলাল আহমদ, নুর মিয়া, ফিরোজ মিয়া, আছমত উল্লাহ ও আয়াজ আলী।
অভিযুক্তদের মধ্যে ১০ জন কারাগারে রয়েছে। একজন সৌদি আরবে আটক আছে। এছাড়া পলাতক আছে আরো দুইজন।
অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার প্রধান আসামি মুহিত আলমের স্ত্রীসহ আরো একজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে এই মামলায় দেশে আটক ১০ আসামির মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ১২ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘রেজিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল’ এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ঘোষণা দেন, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শিশু রাজন হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই বুধবার সকালে সিলেট নগরীর কুমারগাঁওয়ে রাজনকে ভ্যান গাড়ি চুরির অপবাদে খুঁটির সাথে বেঁধে লোহার রোল দিয়ে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে রাজনকে হত্যা করা হয়।
এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে হত্যার পর একটি মাইক্রোবাস যোগে (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৪-০৫১৬) রাজনের লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয়।
এ সময় শহরতলীর কুমারগাঁও এলাকা থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় এ খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মুহিত আলমকে আটক করে জালালাবাদ থানা পুলিশ।
আটকের পর মুহিত পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে রাজন হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। রাজনের শরীরে ৬৪ জায়গায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ হত্যার ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে জালালাবাদ থানায় মামলা দায়ের করেন রাজনের বাবা শেখ আজিজুর রহমান (৪৫)। মামলার আসামিরা হলেন, মুহিত আলম (৩২), তার ভাই কামরুল ইসলাম (২৪), তাদের সহযোগী আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না মিয়া ওরফে বড় ময়না (৪৫)।
মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজ কুমারগাঁও বাস স্টেশন সংলগ্ন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের বাসিন্দা।
৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ