প্রবাস ডেস্ক : বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত হলেও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সর্বদায় বাংলাদেশ ইস্যুতে সরব মুক্তমনা ও মানবতাবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযান নিয়ে নিজের নিজের ফেসবুকে আজ পরপর দুটি স্ট্যাটাস দেন তিনি।
বুধবার দিবাগত রাত ১২.১৪ মিনিটে তিনি লেখেন, “জঙ্গি আস্তানা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। পুলিশকে চিৎকার করে ছেলেগুলো বলছিল-- ‘তোমাদের বুলেট-প্রুফ জ্যাকেটের প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু আমাদের তা দরকার নেই, কেননা আমরা আল্লাহর সৈনিক।যদি সাহস থাকে তবে বুলেট-প্রুফ জ্যাকেট খুলে সামনে আসো। আমরা শহীদ হব এবং বেহেশতে যাব, আমরা কোন কিছুর পরোয়া করি না।’
জঙ্গিরা বিশ্বাস করে তারা বেহেশতে যাবে। তাই তারা মারতেও দ্বিধা করে না, মরতেও দ্বিধা করে না।
ধর্মের মতো শিশুতোষ রূপকথা প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের যুক্তি-বুদ্ধি কী করে যে লোপ পাইয়ে দেয় বুঝি না! আফিম কি আর একে খামোকা বলে!”
বুধবার দুপুর ২টার দিকে লেখেন, “যতদিন নাস্তিক মরছিল, ততদিন কারও টনক নড়েনি। বলেছিলাম, নাস্তিক মারা শেষ হলে সাধারণ মুসলমান মারবে, বোরখা হিজাব না পরার জন্য মারবে, নামাজ না পড়ার জন্য অথবা রোজা না রাখার জন্য মারবে। ঠিক ঠিক তাই হচ্ছে। গুলশানের ক্যাফেতে ধনীরা ছিল, ধনীদের ছেলেমেয়ে ছিল। ধনীরা মরেছে বলে জনগণের টনক নড়েছে কিছুটা। গুলশানে না হয়ে গ্রামের কোন্ও চায়ের দোকানে বা দিশি ভাত মাছের দোকানে ঢুকে বিশজন গবির লোককে মেরে ফেলতো যদি ওরা, বিশ্ব মিডিয়া দিনভর খবর করতো না। সরকারেরও টনক নড়তো না। কেউ মরুক আমি চাই না।”
এই স্ট্যাটাসে তিনি আরো লেখেন, “তবে মনে হয় টনক নড়ানোর জন্য ধনী লোকগুলোর আত্মাহুতি দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। এখন সরকার যদি সিনসিয়ারলি বাংলাদেশকে জঙ্গি মুক্ত করতে চায়, তবে ধরে ধরে জঙ্গিদের জঙ্গি হওয়ার শখ এখনই ঘুচিয়ে দেওয়া দরকার। ছেলেপিলেদের যারা জঙ্গি হ্ওয়ার জন্য মগজধোলাই করছে, তাদের রেহাই দিলে কিন্তু চলবে না। ওয়াজ খুৎবা নিষিদ্ধ করলে হয় না? ওসবে তো সরাসরিই জিহাদে যোগ দেওয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। ইন্টারনেটের জিহাদি সাইটগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। আরও একটি জিনিস নিষিদ্ধ করা উচিত আপাতত। কোরানের অনুবাদ।”
স্ট্যাটাসটি শেষ করেন ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু লেখা মাধ্যমে, তিনি লেখেন “বাঙালিরা পড়তে চাইলে আরবি ভাষায় কোরান পড়ুক। মূল ভাষায় কোরান পড়ার উপদেশ তো ইসলামই দেয়। পড়ুক কোরান, ভাষাটা না বুঝে পড়ুক, বিশ্বাস করে পড়ুক যে ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে যা লেখা আছে সবই ভালো কথা, সমতার কথা, সমানাধিকারের কথা, সমমর্মিতার কথা, মানবতার কথা। কোরানে যে বিধর্মী আর অবশ্বিাসীদের মারার কথা লেখা আছে, অনুবাদ পড়ে সেটা না হয় না-ই জানুক ছেলেপিলেরা।”
২৮ জুলাই ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস