প্রবাস ডেস্ক : চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুমোদিত বিএনপির নতুন কমিটিতে ঠাঁই না পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে দলের নেতাদের অনেকেই ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
নতুন কমিটি নিয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ নেতাকর্মীদের চাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সমর্থনে সোমবার নিউ ইয়র্কে দলের নেতাকর্মীদের সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।
তাদের দাবি, বছরের পর বছর ধরে দেশের বাইরে দলীয় কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি যারা এক এগারোর পর গ্রেপ্তার বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার ছেলে তারেক রহমানের মুক্তির দাবিতে বিশ্বজুড়ে প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি।
কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর শনিবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ৫০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এতে স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ, ভাইস চেয়ারম্যান, সম্পাদকমণ্ডলী ও কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়, যাতে দলের পদে থাকা নেতাদের পরিবারের ডজনের বেশি সদস্যের ঠাঁই মিলেছে।
নতুন কমিটি নিয়ে নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি মাওলানা অলিউল্লাহ মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, “এক যুগেরও অধিক সময় যাবত মাঠে সোচ্চার রয়েছি শতশত নেতাকর্মী নিয়ে। কিন্তু মূল্যায়ন করা হলো কই? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং হতাশাব্যঞ্জক। আমরা সকলেই মর্মাহত। কেউই এমন আচরণকে মেনে নিতে পারছি না।”
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির ব্যানারে সোচ্চার রয়েছেন তারেক পরিষদ আন্তর্জাতিক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বাদল।
শনিবার তিনি বলেন, “আমরা শহীদ জিয়ার আদর্শে কাজ করছি। কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করে মার্কিন কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, জাতিসংঘে লবিং চালাচ্ছি বিএনপির পক্ষে।
“আমরা তো এমপি-মন্ত্রী হতে পারবো না। কিংবা লাইসেন্স/পারমিটের জন্য ধরণাও দেব না। এতদসত্ত্বেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমাদের কোনো ঠাঁই কেন হলো না? ত্যাগী নেতাকর্মীরা এজন্য হতাশ হয়ে পড়েছেন।”
নিউইয়র্ক সিটি বিএনপির সভাপতি হাবিবুর রহমান সেলিম রেজা বলেন, “যুক্তরাজ্য থেকে ৬ জন, মালয়েশিয়া ও সউদি আরব থেকে দু’জন করে নেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
“সে আলোকে এবং বিএনপির রাজনীতিতে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বিবেচনা করলে কমপক্ষে ১০ জনের অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন ছিল। সে স্থলে একজনকেও নেওয়া হয়নি। এর চেয়ে বেদনা আর কষ্টের কী হতে পারে।”
২০০৭ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান জন কেরি, সিনেটর হিলারি ক্লিন্টনসহ ১৫ জন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দিন আহমদকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন, যার জন্যে তদবির করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
ওই সময়ে তারেক রহমান, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার মুক্তি দাবিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও তারেক পরিষদের সমন্বয়ে বহির্বিশ্বে লাগাতার কর্মসূচি পালন করা হয়। ১/১১ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনর্বহালের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রাসেলস ও সুইজারল্যান্ডে লবিং চালানো হয়।
সেসব কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া আব্দুল লতিফ সম্রাট, আকতার হোসেন বাদল, গিয়াস আহমেদ, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, জিল্লুর রহমান, মোস্তফা কামাল পাশা বাবুল, কাজী আজম, দিনাজ খান, সোলায়মান সেরনিয়াবাদকও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই পাবেন বলে আশা করেছিলেন নেতাকর্মীরা।কারণ তারা এখনও সব কর্মসূচিতে সোচ্চার রয়েছেন।
নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির দেখার পর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীদের আরও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তা গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।
তারা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের ন্যূনতম মূল্যায়ন ঘটেনি। এতে দলের জন্য কাজে উৎসাহে ভাটা পড়তে পারে।
‘তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ’ ও ‘শফিক রেহমান-মাহমুদুর রহমান মুক্তি পরিষদ’ আয়োজিত সোমবারের ওই সমাবেশে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলন ছিলেন প্রধান অতিথি।
এই সমাবেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির সামনের কর্মসূচিও স্থগিত করা হয়েছে।তার সঙ্গে ১৩ অগাস্ট নিউ ইয়র্ক রাজ্য বিএনপির কমিটি গঠনের জন্যে যে কাউন্সিল অধিবেশন হবার কথা, সেটিও অনিশ্চিতার মুখে পড়েছে।
সমাবেশের অন্যতম আয়োজক ও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা পারভেজ সাজ্জাদ শনিবার রাতে বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাউকেই অন্তর্ভুক্ত না করার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বমহলে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ায় সমাবেশটি স্থগিত করতে বাধ্য হলাম।”
তবে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটলেই হিলারি শিবিরের কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে সমাবেশের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান। -বিডিনিউজ
০৭ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম