কাজী শাহেদ, রাজশাহী থেকে : রাজশাহীর বাগমারায় মা-ছেলে হত্যা মামলায় গত বছর ডিসেম্বরে ভাড়াটে খুনি মনিরুল, কাফি ও রাজ্জাককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
স্বীকারোক্তিতে তারা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন মাস্টার এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থের জোগানদাতা। আবুল হোসেন সম্পর্কে নিহত আকলিমা বেগমের দেবর। তবে তিনি কেন তাকে হত্যা করিয়েছেন, তা তারা জানেন না। তাদের এই স্বীকারোক্তির পর থেকেই আবুল হোসেন ‘পলাতক’।
তবে হঠাৎ করে মূল পরিকল্পনাকারী বদলে দিয়েছে পুলিশ। আবুল হোসেন নয়, এবার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সামনে নিয়ে আসা হয়েছে এনামুল হক নামে এক বিএনপি নেতাকে। এরই মধ্যে এনামুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনামুল বাগমারার বাসুপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার দ্বীপনগর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক।
তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এনামুল হক বাগমারার আকলিমা বেগম (৪৫) ও তার ছেলে জাহিদ হাসান (২৫) হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। এর আগে পিবিআই বলেছিল, এ হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দেউলা রিভারভিউ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন।
২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে উপজেলার দেউলা গ্রামে নিজ বাড়িতে আকলিমা বেগম ও তার ছেলে জাহিদ হাসানকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আকলিমা বেগমের বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের তদন্ত বিভিন্ন সময় নানা দিকে মোড় নেয়। তদন্ত কর্মকর্তাও বদল করা হয় তিন দফা। বর্তমানে পিবিআই রাজশাহীর উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম মণ্ডল মামলাটি তদন্ত করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় এ পর্যন্ত বিএনপি নেতা এনামুল হক ছাড়াও মনিরুল ইসলাম (২১), আবদুর রাজ্জাক (২৮), আবদুল্লাহ আল কাফি (২০), রুহুল আমিন (২৯), রুস্তম আলী (২৫), হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব (৩৫) ও রহমত আলী (৩৮) নামে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্য থেকে মনিরুল, কাফি, আবদুর রাজ্জাক, রহমত ও হাবিব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
পিবিআইর রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) হুমায়ুন কবিরের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডে আপাতত আবুল হোসেনের কোনো ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, এ মামলায় গ্রেফতার বিএনপি নেতা এনামুল হক নিজেকে আবুল হোসেন মাস্টার পরিচয় দিয়ে খুনিদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ১৪ আগস্ট তাকে গ্রেফতারের পর এ মামলায় গ্রেফতার আরেক আসামি হাবিব তাকে শনাক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এনামুল হক মাদক সেবন করেন। আর রহমত আলী বিক্রি করেন। এনামুল প্রথমে রহমতের কাছেই আকলিমা ও জাহিদকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানান। রহমত তখন ভাড়াটে খুনিদের সঙ্গে তার পরিচয় করিয়ে দেন। এ সময় এনামুল নিজেকে আবুল মাস্টার পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন। ভাড়াটে খুনি হাবিব বিষয়টি জানিয়েছেন।’ আসামিরা আদালতে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের নাম বললেও এখন মামলায় বিএনপি নেতাকে অভিযুক্ত করার ঘটনাটিকে ভিন্ন চোখে দেখছেন এনামুলের স্বজনরা। তাদের দাবি, পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাকে বাঁচাতে এনামুলকে জড়িয়েছে।
এনামুলের স্ত্রীর বড় ভাই মাহবুব রশিদ রেন্টু বলেন, ‘যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা সবাই আদালতে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের নাম বলেছেন। কিন্তু পুলিশ হঠাৎ করে এনামুলকে গ্রেফতার করে এখন বলছে তিনিই পরিকল্পনাকারী।’ তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জাহাঙ্গীর আলম মণ্ডল।
তিনি বলেন, ‘মামলার মোড় যখন-তখন ঘুরে যেতে পারে। আমরা গ্রেফতার আসামিদের জবানবন্দির ভিত্তিতেই কাজ করছি।’ তিনি জানান, এ হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত তা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের কারণ কী, তা এখনো উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। এনামুল হককে রিমান্ডে নিয়েও স্বীকারোক্তি আদায় করা যায়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। অভিযোগপত্রে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের নাম না থাকার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা বলতে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মামলায় গ্রেফতার করতে গত বছরের শেষের দিকে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর থেকেই তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে থাকছেন। ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে রাখছেন। হাজির হচ্ছেন না স্কুলেও। তবে স্কুল থেকে বেতন নিচ্ছেন নিয়মিত। হাজিরা খাতায়ও তার উপস্থিতি শতভাগ। - বিডি প্রতিদিন
২৬ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস