রাজশাহী থেকে : পদ্মার এপার-ওপারে ঘটে যাওয়া দুই মায়ের ঘটনায় পুরো দেশ উত্তাল। শনিবার রাতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের আবেদেরঘাট এই হৃদয়বিদারক নজিরের সাক্ষী হয়ে থাকলেন মা তানজিলা খাতুন। আর পদ্মার ওপারে রাজশাহীতে মা তাসলিমা বেগম নিজের ছেলেকেই কুপিয়ে হত্যা করলেন।
নদীর অথৈ পানিতে নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মা তানজিলা নিজের জীবন দিয়ে সন্তানকে বাঁচালেন। স্থানীয়রা যখন তাদের দুজনকে উদ্ধার করে তখন দেখেন মা মারা গেলেও তার কোলে থাকা শিশুটি ছিল জীবিত।
অন্যদিকে রাজশাহীতে শাহরিয়ার আলম কাব্য (০৭) নামে এক শিশুকে ঘুম থেকে তুলে কুপিয়ে হত্যা করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মা। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর নতুন বুধপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, নিহত কাব্যের বাবা রফিকুল ইসলাম মেহেরচণ্ডী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার একটি ওষুধের দোকানও আছে। ঈদের ছুটিতে কাব্য নগরীর সাধুর মোড় এলাকায় তার নানা-নানির বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। গত শনিবার সন্ধ্যায় কাব্যকে তার বাবা রফিকুল নানার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। এরপর ছেলেকে বাড়িতে রেখে তিনি দোকানে যান।
গভীর রাতে বাড়ি ফিরে এসে তিনি ঘর ভেতর থেকে বন্ধ পান। অনেক ডাকাডাকি করার পরও দরজা না খোলায় তিনি প্রতিবেশী কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেন। পরে ঘরের ভেতর তারা শিশু কাব্যের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান। এ সময় মা তসলিমা বেগমও আহত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরে রাতেই নিহত ছেলে ও আহত মাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তসলিমা বেগমকে হাসপাতালের ৩০নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। আর নিহত ছেলের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
নিহত শিশু শাহরিয়ার আলম কাব্যর স্বজনরা জানান, কাব্যর তিন চাচার কারোরই কোনো ছেলে সন্তান নেই। তাই সবার কাছে কাব্য ছিল খুব আদরের। কাব্যর স্বজনদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তসলিমা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তবে স্থানীয়রা দাবি করেন, তসলিমা বেগম ও রফিকুল ইসলামের মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল। তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে কথাবার্তাও চলছিল। এর জের ধরে তসলিমা তার সন্তানকে হত্যা করতে পারে বলে তাদের ধারণা।
পরে ঘরের দরজা ভেঙে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মা তাসলিমা বেগমকে আটক করা হয়েছে বলে জানান মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির।
ময়নাতদন্ত শেষে ডা. এনামুল হক জানান, ধারালো অস্ত্রের চারটি কোপে কাব্যর মৃত্যু হয়েছে। সব আঘাত ছিল মাথার ওপরের অংশে। এর বাইরে লাশের দেহে অন্য কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই।
তিনি বলেন, ‘আঘাতের ধরণ দেখে মনে হচ্ছে, হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিতভাবে হয়েছে। এটি হঠাৎ রাগের বশে সংঘটিত খুন নয়।’
ওসি হুমায়ুন কবির জানান, রাতে ঘুম থেকে তুলে ছেলে কাব্যকে কুপিয়ে হত্যা করেন মা তাসলিমা বেগম। এরপর তাসলিমা নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে মা তাসলিমা মানসিক ভারসাম্যহীন বলেও ধারণা করছে পুলিশ।
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি