উদিসা ইসলাম ও দুলাল আব্দুল্লাহ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহানের কক্ষ থেকে জব্দ করা তিনটি মোবাইল ফোনের তথ্য সংগ্রহ এবং সহকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের মধ্য দিয়েই আত্মহত্যার কারণ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ব্রজ গোপাল। ইতোমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে এবং মোবাইলের তথ্য চেয়ে অপারেটরদের অনুরোধ করাও হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের দরজা ভেঙে নিজ কক্ষ থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহানের (৪৫) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। বিকেল ৫টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর তদন্তের জন্য তার রুম থেকে বেশকিছু জিনিস জব্দ করা হয়। জব্দকৃত তালিকায় রয়েছে, সুইসাইড নোট, ল্যাপটপ ২টি, মোবাইল ফোন ৩টি, ঘুমের ট্যাবলেট (ইজিএম), তরল পদার্থ, পেন ড্রাইভ ৪টি, বালিশের কভার ২টি, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও শেষ সময়ে তার পরিহিত কাপড়ের কাটা অংশ। জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষটি বর্তমানে সিলগালা করা আছে।
তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতিহার থানার উপপরিদর্শক (এস আই) ব্রজ গোপাল বলেন, ‘তিনি কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন সেটি জানার জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলা শুরু করেছি। আজ (সোমবার) ভিসেরার জন্য নমুনাগুলো ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে আমরা অনেকটা পরিষ্কার হতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘সহকর্মীদের সাথে কথা বলার মধ্য দিয়ে তার আত্মহত্যার সম্ভাব্য কারণ ও আত্মহত্যার পেছনে কারও প্ররোচণা আছে কিনা সেগুলো বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘তার মোবাইলে কার কী কথা হয়েছে সেসবের তথ্য চেয়ে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। মামলাটি আমরা গুরুত্ব দিয়েই দেখছি। আমি মামলার তদন্তকারী। কিন্তু আমার সাথে এসি স্যার ও ডিসি স্যারও তদন্ত করছেন। সুইসাইড নোটটি তার নিজের হাতের লেখা কিনা সেটিও পরীক্ষা করা হবে।’
সুইসাইড নোটে সাবেক স্বামীর বিষয়ে উল্লেখ থাকায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের সাথে তার সর্ম্পকটা অনেক আগেই ছুটে গেছে। তারপরও আমরা থলের বিড়ালটা বের করার জন্য চেষ্টা করছি। যেন সবাই সঠিক কারণ জানতে পারে।’
এর আগে মৃত্যুর দ্বিতীয় দিনে সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক এনামুল হক বলেন, ‘আকতার জাহানের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত থেকে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তার মৃত্যু বিষক্রিয়াজনিত কারণে হয়েছে এবং সুরতহালে শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তার সুইসাইড নোটে সাবেক স্বামী তানভীর আহমেদের বিরুদ্ধে সন্তানের প্রতি দায়িত্বহীনতার বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলে ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়।’
উল্লেখ্য, তানভীর আহমেদের সাথে আকতার জাহানের বৈবাহিক সম্পর্ক আইনত ছিন্ন হলেও একই বিভাগে শিক্ষকতার সুবাদে নানাভাবে আকতার জাহানকে হয়রানির অভিযোগ করছেন বিভাগের অন্যান্য সহকর্মীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সহকারী অধ্যাপক বলেন, এটা বিভাগের প্রায় সবাই জানেন কী ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন আকতার জানান। তার সাবেক স্বামী তানভীর আহমেদ বিবাহ বিচ্ছেদের পরও বিভাগীয় সভায় বা অন্যান্য সময় নানাভাবে কটাক্ষ করে কথা বলতেন আকতার জাহানের প্রতি।
গত ১০ সেপ্টেম্বর অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে মতিহার থানায় মামলা করেন আকতার জাহানের ছোট ভাই কামরুল হাসান রতন। মামলায় কামরুল হাসান রতন উল্লেখ করেন, ‘সুইসাইড নোট থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, তিনি (আকতার জাহান) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারও দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী/প্ররোচনাকারীদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে মর্জি হয়।’
মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ঈদের ছুটির কারণে ভিসেরার জন্য আলামত পাঠানো যায়নি। সোমবার পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পেলে কোন বিষক্রিয়ায় তিনি মারা গেছেন, তা স্পষ্ট হওয়া যাবে।’ কিভাবে তিনি বিষ সংগ্রহ করেছিলেন সেটিও তদন্তের মধ্য দিয়ে জানা যাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। -বাংলা ট্রিবিউন।
১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম