রাজশাহী : অধ্যাপক আখতার জাহানের স্মরণে শোক র্যালি বের করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। চারদিকে পিনপতন নীরবতা। অন্ধকার ভেদ করে প্রজেক্টরের রঙিন পর্দায় ভেসে উঠল প্রিয় শিক্ষকের ছবি।
আজ রোববার বেলা একটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২৩ নম্বর কক্ষে বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহানের স্মরণে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে আকতার জাহানকে নিয়ে নির্মিত একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখ ভিজে ওঠে। স্মৃতিচারণার পাশাপাশি প্রিয় শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবি ওঠে।
৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের নিজ কক্ষ থেকে আকতার জাহান জলিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রিয় এ সহকর্মীকে নিয়ে বলতে গিয়ে আজকের শোকসভায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক মশিহুর রহমান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন দ্বিতীয়বর্ষে তখন জলি (আকতার জাহান) প্রথমবর্ষে ভর্তি হন। রাজশাহীতে এসে সহকর্মী হওয়ার পর প্রতিদিন আমার খোঁজ নিতেন তিনি। সবার সঙ্গেই পেশার বাইরেও ব্যক্তি-সম্পর্ক রেখে গেছেন জলি।
সহকর্মী সেলিম রেজা বলেন, কী পরিস্থিতি তৈরি হলে একটা মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে তা আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে। আমরাও জলির মৃত্যুর দায় এড়াতে পারি না।
প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, জলি আপার মৃত্যু আমাকে দুভাবে বিধ্বস্ত করেছে, ব্যক্তি হিসেবে, সহকর্মী হিসেবে ও বিভাগের সভাপতি হিসেবে। দায়টা আমার একটু বেশি।
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবা কানিজ বলেন, আকতার জাহান এত একাকী ছিলেন, এতটা সমস্যার মধ্যদিয়ে যাচ্ছিলেন বুঝতে দেননি কখনো। এখন আমার মনে হয়, কেন আমি তাকে বুঝলাম না, একটু সময় দিলাম না। দায়টা আমি এড়াতে পারছি না।
আকতার জাহানের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন তার এক সময়ের প্রতিবেশী ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি গোলাম সাব্বির সাত্তার। তিনি বলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব সেই মামলার যথাযথ দেখভাল করা, যাতে প্রকৃত সত্য সবার সামনে উন্মোচিত হয়।
আকতার জাহানের ছোট ভাই কামরুল হাসান বলেন, আমার বোন মারা গেছেন, তাকে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণ, সুষ্ঠু তদন্তের সঠিক যে চিত্র; সেটা সবার সামনে আসবে, এটাই আশা করছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ আজম বলেন, আমরা কেন আকতার জাহানের অভিমান বুঝতে পারিনি, এটা আমাদের ব্যর্থতা। এ মৃত্যুতে যদি কোনো প্ররোচনাকারী থাকে, তার বিচার চাই। তিনি শুধু আকতার জাহানকে হত্যা করেনি, সবার স্বপ্নকে হত্যা করেছে।
সভায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ফয়জার রহমান, শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম, জোবায়দা শিরিন, আতিকুর রহমান, হুসাইন মিঠু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জুবেরী ভবনের ৩০৩ নম্বর কক্ষ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আখতার জাহান জলির।
২৫ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম