রাজশাহী : প্রায় এক বছর আগে রাজশাহীতে একটি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে আটক হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু। এ সময় তিনমাস জেলও খেটেছিলেন তিনি। এরপর থেকেই তাকে হুমকি দেওয়া হতো বলে অভিযোগ করেন লিপুর চাচা ও সহপাঠীরা। ওই ঘটনার জেরে এ ‘হত্যা’র শিকার হতে পারে বলেও ধারণা করছেন তারা, এমনটাই জানালেন।
লিপুর চাচা মো. বশীর বলেন, ‘পরিবার বা এলাকায় কারও সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব নেই। তবে প্রায় এক বছর আগে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গেলে তাকে আটক করে পুলিশ। এরপর থেকে তাকে হুমকি-ধামকি দেওয়া হতো।’
এ ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের নামে মামলা করেছেন চাচা মো. বশীর উদ্দিন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি এ মামলা দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নবাব আব্দুল লতিফ হল থেকে লিপুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত কমিশনার সরদার তমিজউদ্দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রাধ্যক্ষ, ছাত্র উপদেষ্টা, জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রমুখ। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লিপুর রুমমেট মনিরুল ইসলাম, বন্ধু প্রদীপসহ হলের অন্য দুই কর্মচারী। এছাড়া ঘটনাস্থল ও লিপুর কক্ষ থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেন পুলিশ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিন তলা হলের দক্ষিণ ব্লকের প্রায় দুই মিটার দূরে একটি ড্রেনে লিপুর লাশ পড়ে আছে। তার পরনে লুঙ্গি, মাথাটা বাম পাশে হেলে ছিল। খালি পা। যে জায়গায় লাশ পড়ে আছে তার দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে ৩০ ফুটের মতো দূরে ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা। দেয়ালের উচ্চতা প্রায় ১৫ ফিট। দেয়ালেও ওপর প্রায় দুই ফুটের কাঁটাতারের বেড়া। আর উত্তর দিকে হলের খাবার ঘর। সেখানে খাবার ও জ্বালানি পরিবহনের জন্য পূর্ব দিকে একটি কাঠের তালাবদ্ধ দরজা আছে।
আবাসিক শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, প্রায় একহাত চওড়া এক ড্রেনে তার লাশ পড়ে ছিল। যা দেখে মনে হচ্ছে তাকে হত্যা করে সেখানে লাশটা রাখা হতে পারে। কারণ, লাশ যদি ছাদ থেকে পড়তো তাহলে তার লাশটা তীর্যকভাবে পড়তো না বরং কৌণিকভাবে পড়তো। এ হিসেবে তার লাশ পড়ার কথা ড্রেন থেকে আরও দূরে। কারণ ওই ড্রেনটা তিন তলা ওই ভবনের ছাদের কার্নিশ বরাবর। কিন্তু তার লাশটা ওই এক হাত ড্রেনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, লাশ যেখানে পড়ে ছিল তা দেখে মনে হচ্ছে, কেউ চাইলেই বাহিরে থেকে ইটের দেওয়াল টপকে এসে লাশটা রাখতে পারে। কারণ, ইটের দেওয়াল সংলগ্ন বাহিরের অংশে গাছ আছে। আর নকল চাবি থাকলে সে গাছ বেয়ে ভেতরে ঢুকে দরজার তালা খোলা সম্ভব। এরপর সেখানে লাশটা রাখা হতে পারে যাতে সবার ধারণা হয়, ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও ওই দেয়ালের বাহিরের মাঠ থেকে পুলিশ স্যান্ডেল উদ্ধার করেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
এছাড়া, লাশের মাথার ডান দিকে আঘাতের চিহ্ন আছে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান। ঘটনাস্থলে লিপুর মাথা বাম দিকে হেলে ছিল। সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে পুলিশের মতিহার থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লিপুর চাচা সন্ধ্যায় থানায় অজ্ঞাতনামাদের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। তদন্ত চলছে।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল পৌনে ৫টায় তার লাশ আনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসিজদে জানাজা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তার লাশ বাড়ির নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে পাঠানো হয়। -বাংলা ট্রিবিউন।
২১ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম