রাজশাহী : তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কীকরণ থাকা সত্ত্বেও গ্রাম ও শহর উভয় অঞ্চলের স্কুলের শিক্ষার্থীরা ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে। ফলে অভিভাবকদের মধ্যে মারাত্মক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার এক প্রতিবেদনা এ তথ্য জানানো হয়।
মনোয়ারউজ্জামান নামের এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ধূমপান এখন একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেকটি স্কুলে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ধূমপানে আসক্ত।
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার এম আর কে হাইস্কুলের শিক্ষক লুৎফর রহমান জানান, তাদের কিছুসংখ্যক ছাত্র ধূমপানে আসক্ত। তিনি বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের মধ্যে ধূমপান বিরোধী ক্যাম্পেইন শুরু করেছি।’
নগরীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ টি এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা স্কুলের ছাত্র তরুণদেরকে জনবহুল স্থানে ধূমপান করতে দেখি। এটা খুবই অদ্ভুত দৃশ্য এবং তা জনসাধারণের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, রেলওয়ে স্টেশন, মার্কেট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল স্থানে অনবরত ধূমপান জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্রেতা ও বিক্রেতারা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মানছে না এবং জনবহুল স্থানে ধূমপান করায় অধূমপায়ী ব্যক্তিরাও দূষণের শিকার হচ্ছেন। ফলে প্রায়ই নগরীতে ধূমপায়ী ও অধূমপায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান খান বলেন, ধূমপান ক্যান্সার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ ও সমস্যার সৃষ্টি করে।
ব্লাস্ট’র স্থানীয় ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট আবদুস সামাদ বাসসকে বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদেরকে ধূমপান থেকে বিরত থাকার জন্য পরামর্শ দেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: অনেকের মধ্যে তা কার্যকর করা যাচ্ছে না।’
অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি)’র নির্বাহী পরিচালক সেলিমা সারোয়ার বলেন, সমাজে তামাক জাত পণ্যের ব্যবহার এখন আতঙ্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী তরুণদের ২০ ভাগই তামাকজাত পণ্য গ্রহণ করছে এবং তা ক্রমশ: বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি এ অঞ্চলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অমান্যের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানরা ধূমপানে আসক্ত হওয়ায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কেউ কেউ তাদের সন্তানদের পুলিশের হাতে বা পুনর্বাসন কেন্দ্রেও পাঠাচ্ছেন।
তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা ও এ ব্যাপারে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রফেসর চৌধুরী বলেন, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য যে কোন ধরনের তামাকজাত পণ্য গ্রহণের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করা প্রয়োজন। সরকার এসব পণ্যের ওপর বেশি করে ট্যাক্স ধার্য্য করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তামাকজাত পণ্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও আমরা এর বিরুদ্ধে যথাযথভাবে প্রচারাভিযান চালাতে পারছি না।’
২৬ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস