রাজশাহী : একের পর এক বিয়ে। কোনো সংসার দুই মাস, আবার কোনোটি বড়জোর ছয় মাস। এভাবেই এক এক করে ২৯ জনকে বিয়ে করেছেন মনিরা খাতুন স্বপ্না। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ তার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। কখনও হিন্দু নারী সেজে হিন্দু ছেলের সংসারও করেছেন। এদের অনেককেই আবার মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে।
মনিরা খাতুন স্বপ্নার বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ এনেছেন রাজশাহী মহানগরীর শিরোইল এলাকার সাইফুল ইসলাম ওরফে ফটিক নামে এক ব্যক্তি। তিনি মনিরা খাতুনের ২৯তম স্বামী বলে দাবি করেন।
সাইফুল ইসলাম তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর মনিরা খাতুন স্বপ্না তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের সময় মুনিরা আগে ২৮ স্বামী ও তিন সন্তানের কথা গোপন করেন। বিয়ের পর থেকেই তার চলাফেরা অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে। বাড়িতে অনেক লোক তার অগোচরে যাতায়াত করতো। নিষেধ করলেও স্বপ্না শুনতেন না। উল্টো নানানভাবে হুমকি দিতেন। স্বপ্না তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নেন।
সাইফুল ইসলাম আরও জানান, স্বপ্নার আগের ২৮ স্বামী ও সংসারের সত্যতা পেয়ে চলতি বছর ২৬ মে তাকে আইনসিদ্ধভাবেই তালাক দেয়া হয়। এরপরেই স্বপ্না তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বপ্না নাটোরের কানাইখালী (মাদরাসা মোড়) এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের মেয়ে। তার বর্তমান অবস্থান রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানার কাটাখালী বেলঘরিয়া এলাকায়। প্রথম স্বামীর নাম মখলেসুর রহমান। তার বাড়ি মহানগরীর শালবাগান এলাকার। ১৯৯২ সালের ৮ আগস্ট তাকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্বামী রাজশাহী মহানগরীর হেতেম খাঁ এলাকার শেখ মোকলেসুর রহমান রঞ্জু। তাকে বিয়ের সঠিক সময় না জানা গেলেও তাকে তালাক দেয়া হয় ২০০০ সালের ৫ নভেম্বর। তৃতীয় স্বামীর নামও একই। তারও বাড়ি হেতেম খাঁ এলাকায়। ২০০১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ে হয়।
এরপরে মহানগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার আব্দুল বারী নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট। এরপরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী গুপ্ত সালাম, পবার দারুসা এলাকার আব্দুস সালাম, রাজশাহী মহানগরীর শালবাগান এলাকার নুরুল কাজী, সাহেব বাজার এলাকার সাঈদ, ডলার, মোহপুর উপজেলার বেলাল, বালিয়াপুকুর এলাকার মামুনকে বিভিন্ন সময়ে বিয়ে করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে তাদের বিয়ের সঠিক তারিখ পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও রাজশাহীর পুঠিয়ার জামিরার আব্দুল মতিন মুকুল নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন ২০০৬ সালের ১৪ এপ্রিল। তার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয় ২০০৬ সালের ৭ জুন। ওই দিনই স্বপ্না বিয়ে করেন নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার আব্দুল মতিন নামে এক ব্যক্তিকে। এরপরে আজাহার আলী নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন ২০০৬ সালের ১০ মার্চ।
পরে বগুড়া ধনুটের আজহার মল্লিক নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন স্বপ্না। এর কয়েকমাস পরেই একই এলাকার আবু বক্কর নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। বগুড়ার ওই দুই বিয়ের ঘটনায় সেখানকার স্থানীয় ‘দৈনিক উত্তর কোণ’ পত্রিকায় ২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ‘ধুনটে নষ্টা মহিলার দাপট, এলাকাবাসী শঙ্কিত’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রকাশ হয়।
এরপর ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়া ভেড়ামারা উপজেলার মহারাজপুরের আশরাফুল আলম নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন স্বপ্না। তাকে তালাক দেন একই বছর ১ এপ্রিল। এবার হিন্দু নারী সেজে একই জেলার শিমুল নামে ধনী হিন্দু পরিবারের ছেলেকে বিয়ে করেন তিনি।
সেখান থেকে স্বপ্না আবার রাজশাহীতে ফিরে আসেন ও মহানগরীর হেতেম খাঁ এলাকার আব্দুর রহমান নুরাজ নামে একজনকে বিয়ে করেন ২০০৮ সালের ২৫ মে ও তালাক হয় ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। এরপরে দিদার নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন তিনি। পরে বিয়ে করেন তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা এলাকার কালুকে।
এরপরে স্বপ্না সিলেটে পাড়ি জমান। সিলেট শহরের দিপক নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন ২০১০ সালের ১ জুন। এরপর ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর একই এলাকার বাবুল নামের আরও একজনকে বিয়ে করেন।
সেখান থেকে আবার স্বপ্না রাজশাহীতে ফিরে এসে মহানগরী এলাকার আলুপট্টি মোড় এলাকার রাব্বানী এরপরে শালবাগান এলাকার আশরাফ নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন ২০১৩ সালের ১২ মে, ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলঘরিয়া এলাকার শফিউল আলম, ২০১৪ সালের ২২ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল বালিকাপাড়া এলাকার রোকনুজ্জামান ও ২৯ নম্বর স্বামী হিসেবে শিরোইলের সাইফুল ইসলামকে ২০১৪ সালের ৪ অক্টোবর বিয়ে করেন। এদের মধ্যে কয়েকজনের নামে আদালতে মামলা চলমান আছে।
এ ব্যাপারে মনিরা খাতুন স্বপ্নার অভিযোগ, তার স্বামী জামায়াতে ইসলামীর লোক। তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়েছে। এ কারণে তিনি বিভিন্নভাবে বদনাম রটিয়ে বেড়াচ্ছেন।
একাধিক বিয়ের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাকে সমাজে হেয় করার জন্য একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছে। এছাড়া অন্য কিছু নয়।-বাংলামেইল
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে