একটি চড়ুই পাখি ঝুলছিলো ঘুড়ির সুতায়। আর ঘুড়ির সুতাটি আটকে ছিলো বিদ্যুতের তারে। জানালা দিয়ে তাকাতেই চোখ পড়লো। পাখিটি মুক্তি পেতে উড়ে যাবার প্রাণপণ চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তার সঙ্গী মাঝে মাঝেই লেজ নাড়িয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো বিষয়টি। কিন্তু অসহায় পাখিটির সঙ্গীকে বাঁচাতে কিছুই করার ছিলো না!
ঘটনাস্থল রাজশাহী নগরীর আলুপট্টি এলাকা। সমকালের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান সৌরভ হাবিব বিষয়টি জানালা দিয়ে দেখে বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টা করেন পাখিটিকে মুক্ত করতে। কিন্তু প্রায় তিরিশ ফুট উচ্চতায় আটকে থাকা পাখিটাকে মুক্ত করার কোন পথ না পেয়ে হতাশ হন। এরপর ফোন করে খবর দেন ফায়ার সার্ভিসকে।
দুপুর ১২টার দিকে খবর পাওয়ার দশ মিনিটের মধ্যেই দুটি গাড়ি নিয়ে হাজির হন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। দুটি ইউনিটে দশজন সদস্য মই দিয়ে উঠে মূহূর্তেই মুক্ত করেন পাখিটিকে। পাখিটি তখনই কিচিরমিচির শব্দ করে মুক্তির আনন্দে উড়ে যায় আকাশে। আর মাটিতে থাকা উৎসুক শত শত মানুষ তখন হাততালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন।
সৌরভ হাবিব বলেন, পাখি বাঁচাতে ফায়ার সার্ভিস গাড়ি নিয়ে ছুটে আসবে তা ধারণা ছিলো না। আনেকটা হতাশা নিয়েই ফোন করি। তার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি হুইসেল বাজাতে বাজাতে ছুটে আসে। এসময় অনেক মানুষ জুটে যায়। তারা ভেবেছিলেন কোথাও আগুন লেগেছে। ভুল ভাঙলো যখন পাখিটিতে দেখিয়ে দেই তখন। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কোন অবহেলা করেনি। বরং দ্রুত তারা মই ভিড়িয়ে পাখিটিকে মুক্ত করেছে।
তিনি বলেন, পাখিটি মুুক্ত হবার সাথে সাথে সবাই হাততালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন- ‘একটি প্রাণ বাঁচলো, মহান একটি কাজ হলো।’ আবার কেউ কেউ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলেছেন, ‘একটি পাখির জন্য এত বাড়াবাড়ি ঠিক হয়নি।’
সৌরভ হাবিব বলেন, ‘একটি প্রাণ সেটা যারই হোক, যত ক্ষুদ্রই হোক না কেনো, তাকে বাঁচানো প্রতিটি মানুষেরই দায়িত্ব হওয়া উচিত। একাজটি দায়িত্ব নিয়ে করার জন্য ফায়ার সার্ভিসকে ধন্যবাদ এবং এই বিভাগটিকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করায় বর্তমান সরকারকেও ধন্যবাদ জানাই।’
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন আফিসার মেহেরুল ইসলাম বলেন, ‘যে কোন দুর্ঘটনায় সাড়া দেয়া আমাদের দায়িত্ব। আমরা প্রত্যেকটা প্রাণেরই সমান মূল্য দেই। যেকোন দুর্ঘটনায় আমরা ছুটে যাই। এটা আমাদের কর্তব্য। তাই যে কোন ছোট বড় দুর্ঘটনা বা দুর্যোগে আমাদের খবর দিলে আমরা ছুটে যাবো। এতে হতাশা বা বিব্রত হবার কোন কারণ নেই। চড়ুই পাখি উদ্ধারে আমাদের দুটি ইউনিটের ১০জন সদস্য অংশ নেন।’
প্রাণ বৈচিত্র সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বয়কারি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই কাজটি অনেক মানবিক ও সচেতনামূলক হয়েছে। এভাবেই সকল প্রাণের বেঁচে থাকার অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’
এমটি নিউজ/এপি/ডিসি