নিউজ ডেস্ক : আমের মৌসুম প্রায় শেষ। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার রাজশাহী থেকে বিদেশে আম রফতানি হয়নি। তবে মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে আম রফতানি শুরু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় প্রথম রাজশাহী থেকে আম সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। ‘নর্থবেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড’ নামে রাজশাহীর একটি প্রতিষ্ঠান আম রফতানি শুরু করেছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ তথ্য জানিয়েছেন।
রোববার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এই এমপি লিখেছেন, ‘রাজশাহীর আম রফতানি শুরু করল নর্থবেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড। প্রথম চালান সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা করে রোববার সন্ধ্যায়। সবার দোয়া প্রত্যাশা করছি।’
তিনি লেখেন– ‘প্রথম চালানে কোনো সমস্যা না হলে এটি চলবে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। যাবে আরও কিছু দেশে। এ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনের ২০২১-এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। এই বছর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলাম ১০০ টন। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না বিভিন্ন কারণে।’
আগামী বছর রাজশাহীতেই আমের মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী লেখেন– ‘সামনের বছরে রাজশাহীর নিজস্ব বা সরকারিভাবে স্থাপিত হবে ফলমূলের কোয়ারেন্টিন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, যা সবাই ব্যবহার করতে পারবেন। আশা করি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।’
আম রফতানির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহীর উপপরিচালক শামসুল হক বলেন, খবরটি আমিও শুনেছি। কারা পাঠাচ্ছে, কীভাবে পাঠাচ্ছে তা জানার চেষ্টা করছি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। তারা সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে আম নিয়ে যান। তাই আমরা জানি না। তবে এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।
কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রফতানির উদ্দেশ্যে এ বছর রাজশাহীতে প্রায় সাত লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলার চাষিরা সবচেয়ে বেশি উন্নত এই প্রযুক্তিতে আম চাষ করেছিলেন। কিন্তু রোববারের আগে একটি আমও বিদেশে পাঠানো যায়নি। স্থানীয় বাজারেই সেসব আম বিক্রি করছেন চাষিরা। এ অবস্থায় নর্থবেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড যদি রোববার রফতানি করে, তবে এটিই এ বছর রাজশাহীর আমের প্রথম বিদেশযাত্রা।
প্রতিষ্ঠানটি আম রফতানি শুরু করলেও মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। উন্নতজাতের প্রায় সব আমই শেষ। উন্নতজাতের মধ্যে গাছে আছে কিছু আমরুপালি। বাজারে উঠেছে ফজলিও। সবার শেষে আসবে আশ্বিনা। সর্বশেষ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ঠিকমতো রাজশাহীর আম ইউরোপের বাজারে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ঢাকায় প্ল্যান কোয়ারেন্টিন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে কোয়ারেন্টিনের নামে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়।
সামান্য দাগ থাকলেই আম বাদ দেয়া শুরু হয়। ফলে রফতানিকারকরা আম পাঠাতে পারেননি। এবারও করোনার কারণে আগে আম পাঠানো সম্ভব হয়নি।রাজশাহী জেলায় আমবাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধ'রা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার টন। অপরিপক্ব আম নামানো ঠেকাতে গেল কয়েক বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।
সে অনুযায়ী ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামানোর সময় শুরু হয়। এ ছাড়া ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা, ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত ২৮, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আমরুপালি ও ফজলি নামানো শুরু হয়। সবশেষে ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারী আম-৪ জাতের আম নামানো শুরু হয়েছে।