রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারুইপাড়ার আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী ৭০ বছর পর আপন ঠিকানাসহ প্রিয়জনদের খুঁজে পেয়েছেন। খুঁজে পাওয়ার পর স্বজনরা জানান, ছেলের আশায় এখনো পথ চেয়ে আছেন আব্দুল কুদ্দুসের শতবর্ষী মা। আর খুব শীঘ্রই দেখা হতে যাচ্ছে মায়ের সঙ্গে ছেলের।
৭০ বছর আগে পুলিশ সদস্য চাচার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে রাজশাহীর বাগমারায় বেড়াতে এসে হারিয়ে যান ১০ বছর বয়সী আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পাওয়া গেলে পরিবারের সদস্যরা মনে করেন সম্পত্তির লোভে পিতা-মাতার একমাত্র পুত্রসন্তান আব্দুল কুদ্দুসকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে হত্যা করেছে তার চাচা।
৭০ বছর পর হারিয়ে যাওয়া সেই আব্দুল কুদ্দুস মুন্সীকে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার। ১০ বছরের সেই ছোট্ট শিশুটি আজ ৮০ বছরের বৃদ্ধ। দিন দশেক আগে আইয়ূব আলী নামের পরিচিত একজনের ফেসবুক আইডিতে হারিয়ে যাওয়ার গল্প বলেন আব্দুল কুদ্দুস।
সেখানে তিনি শুধু পিতা-মাতা ও নিজ গ্রাম বাড্ডার নাম বলতে পারেন। পরে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা বাড্ডা গ্রামের বাসিন্দারা সাড়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে আব্দুল কুদ্দুসকে খুঁজে পান তার পরিবারের সদস্যরা।
আব্দুল কুদ্দুসের স্বজনরা জানান, এখনো জীবিত আছেন তার শতবর্ষী মা ও এক বোন। এরই মধ্যে মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথাও বলেছেন আব্দুল কুদ্দুস। আর এত বছর পর নিজের পরিবার খুঁজে পাওয়ায় খুশি আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী-সন্তানরাও।
আইয়ূব আলী বলেন, গত ১২ এপ্রিল আব্দুল কুদ্দুসের ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও আমার ফেসবুক পেজে আপলোড করি। আর ফেসবুকে ওই পোস্টের ওপর লিখেছিলাম যে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার এই বৃদ্ধ আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে হারিয়ে গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। কেউ যদি তার কথা শুনে চিনতে পারেন।
তিনি বলেন, এরপর বহু মানুষ সেই পোস্ট শেয়ার করেন। বিদেশে কিছু মানুষ ওই এলাকার আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন তারা দেখেন। তারপর ওই এলাকার মানুষ ফেসবুকে আব্দুল কুদ্দুসের ভিডিও শুনেন। এতে ৭০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুসের সন্ধান পান তার পরিবারের সদস্যরা।
আব্দুল কুদ্দুস সাংবাদিকদের জানান, আমার চাচা পুলিশের সাথে বাগমারা থানায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে বেড়াতে এসে হারিয়ে যাই। তারপর আত্রাই সিংসাড়া গ্রামে কোনোভাবে চলে আসি। তারপর বাগমারা বারুইপাড়া গ্রামের এক মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। এ নিয়ে এখানেই আমার বসতবাড়ি হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমার মায়ের সঙ্গে ভিডিও কলে প্রথম যখন কথা বলি তখন আমার মা আমাকে বলে তুই আমার হারিয়ে যাওয়া আব্দুল কুদ্দুস বাবা। তোর ছোটবেলায় হাত কেটে গিয়েছিল। মায়ের মুখে এ কথা শুনার পরে আমি বলি, মা তোর কুদ্দুসের কোন হাত কেটে গিয়েছিল, তখন মা বলে বাম হাতের বুড়া আঙুল কেটে গিয়েছিল, তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। আর বুঝতে পারি যে সেই আমার মা।
এদিকে হারিয়ে যাওয়ার ৭০ বছর পর পরিবারের সাথে যোগাযোগের বিষয়টি আলোড়ন ফেলেছে আব্দুল কুদ্দুসের বর্তমান আবাস বাগমারার বারুইপাড়া গ্রামেও। চায়ের দোকান থেকে পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে মানুষের মুখে ফিরছে আব্দুল কুদ্দুসের গল্প।
সব ঠিক থাকলে শনিবার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাবেন আব্দুল কুদ্দুস মুন্সী। ৭০ বছর পর মা ফিরে পাবেন তার বুধের ধন, আর ছেলে পাবেন মায়ের পরশ।