এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : রাজশাহীর বাঘায় কালবৈশাখীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বিকুল আলী। ঘরের চালা উড়ে তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে বিপাশা খাতুনের সব বইখাতা ভিজে গেছে। পাশে হাবিবুর রহমান কালুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেই বাড়ির বারান্দায় সোমবার রোদে বইখাতা শুকাতে দেখা গেছে।
এ সময় বিপাশা খাতুন বলেন, আমার বাবা দিনমজুর, দিন আনে দিন খায়। অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে তিন সদস্যের সংসার চালান। আমার দাদার জমিতে দুই কক্ষের টিনের ছাপড়াঘরে বসবাস করি।
হঠাৎ রোববার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কালবৈশাখী টিনের চালা উড়ে নিয়ে দক্ষিণে পুকুরে পাড়ে ফেলায় । এ সময় বৃষ্টিতে সব বইখাতা ভিজে যায়। বাড়িতে থাকার কোনো জায়গা নেই। তাই পাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বইখাতা শুকাচ্ছি। বিপাশা খাতুন তেথুলিয়া নওদাপাড়া গ্রামের ও তেথুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
এদিকে ঝড়ে উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের তেথুলিয়া বাজারের দোকানপাট উড়ে গেছে। বাজারের পাশের তেথুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও তেথুলিয়া পীরগাছা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেন্স ম্যানেজমেন্ট কলেজ ভবনের চালা উড়ে গেছে। তেথুলিয়া নওদাপাড়া, কান্দিপাড়া, ফতিয়াড় দাঁড়, পীরগাছা গ্রামে কালবৈশাখীতে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির বাড়িঘর ভেঙে গেছে। এ ছাড়া তেথুলিয়া বাজারে একটি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে তেথুলিয়া বাজারের ফার্নিচার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি দোকানঘরের মধ্যে কাজ করছিলাম। হঠাৎ ঝড়ে ঘরের চালা উড়ে ১০০ মিটার দূরে তেথুলিয়া সবজি বাজারে কড়ইগাছে গিয়ে পড়ে।
সেই ঘরের ১৬ বান্ডিল টিনের ঘর পাশে মসজিদের ছাদে ও গাছে কিছু টিন ঝুলে থাকলেও বাকি টিনের সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া মদন আলীর দোকান, সুজন আলীর বাড়ির চালা, লেদু প্রাংয়ের দোকান, কামরুল ইসলামের দোকানের চালা উড়ে গেছে।
নওদাপাড়া মিশন আলীর ঘর, তেথুলিয়া কান্দিপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নানের ঘরের ওপর গাছ পড়ে স্ত্রী নাসরিন আহত হন। ফতিয়ার দাঁড় গ্রামের মুক্তার আলীর ২৫ বছর বয়সের একটি আড়াজাম গাছ উপড়ে গেছে। পাশে মুন্টু ও জালেম আলীর ঘর উড়ে গেছে।
রাস্তার পূর্বদিকে আহমেদ আলীর ঘর ভেঙে কোরবানির খাসি চাপা পড়ে পা ভেঙে গেছে। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন আহমদ আলী। শহিদুল ইসলাম, জিন্দার আলী, সুজন আলী, কাচু উদ্দিনের বাড়িঘরসহ শত শত আমগাছ, কলা, মেহগনিগাছের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতানা বলেন, গম, মসুর উঠে গেছে। কিছুটা কাঠজাতীয় ও আমের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের জন্য কাজ করা হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু বলেন, হঠাৎ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, উপড়ে গেছে গাছপালা, উড়ে গেছে বাড়ির চালা। ৫টি গ্রামে বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে টিনের চালা উড়ে গাছে বেঁধে আছে। বৈদ্যুতের খুঁটি ও তার ছিঁড়ে লাইন নষ্ট হয়ে গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আখতার বলেন, ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।