মঙ্গলবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ১০:০৬:৫৮

ভাইয়ের মৃত্যু, শোকে মারা গেলেন বোনও

ভাইয়ের মৃত্যু, শোকে মারা গেলেন বোনও

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : ছেলে পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করে পরিবারের হাল ধরবেন এমনই প্রত্যাশা ছিল বাবার। সেই স্বপ্ন পূরণের পথে কিছুদিন আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করেন মুরাদ মৃধা। 

তবে তিনি পরিবারের হাল ধরার আর সুযোগ পেলেন না। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সোমবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। 

মুরাদের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে গতকাল রাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন তার চাচাতো বোন দোলেনা বেগম। মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) সকালে নাটোর সদর হাসপাতালে মারা যান তিনিও।

মঙ্গলবার সকালে মুরাদ মৃধার গ্রামের বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রামের খাটাসখৈল গ্রামে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর বেলা ১১টায় জানাজা শেষে তাকে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। 

এর ১০ দিন আগে মুরাদ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি কিডনি জটিলতায় ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হন। মুরাদ মৃধা খাটাসখৈল গ্রামের আব্দুস সাত্তারের দুই ছেলের মধ্যে ছোট। 

মুরাদের বাবা আব্দুস সাত্তার মৃধা জানান, অন্যের খেজুরের গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতেন। গুড় বিক্রির টাকা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান। 

বাড়ি ঘর তেমন একটা করতে পারেননি। উপার্জনের বড় অংশ ব্যয় করেছেন দুই ছেলের পড়াশোনায়। বড় ছেলে মুন্না মৃধা। 

তিনি গত বছর মাস্টার্স শেষ করে স্কয়ার কোম্পানিতে কর্মকর্তা পদে চাকরি করছেন। ছোট ছেলে মুরাদ আহমেদ মৃধা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন। এক মাস আগে তার অনার্স পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। স্বপ্ন ছিল পড়া লেখা শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হবে। 

তিনি আরও বলেন, মুরাদ ২৬ জানুয়ারি বাড়ি এসে জ্বরে আক্রান্ত হয়। সঙ্গে বমি ছিল। স্থানীয় একজন চিকিৎসককে দেখালে তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে দেন। 

রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। পাঁচদিন চিকিৎসা করার পরও সুস্থ না হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে লিভার ও কিডনি সমস্যা ধরা পড়ে। গত বৃহস্পতিবার তার ডায়ালাইসিস শুরু হয়। 

কিন্তু তাতেও তিনি সুস্থ হননি। সোমবার তাকে দ্বিতীয় ডায়ালাইসিসে নেওয়া হলে অবস্থার আরও অবনতি হয় এবং সন্ধ্যায় তার  মৃত্যু হয়। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে শতাধিক সহপাঠী তার মরদেহ বাড়িতে পৌঁছে দেন। 

মুরাদের চাচা আফছার মৃধা বলেন, আমাদের পৈত্রিক জমি জমা তেমন ছিল না। তবুও ভাই তার ছেলেদের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। 

এমনকি সুদের ওপর টাকা ধার নিয়ে ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ ও খাবারের ব্যবস্থা করতেন। তিনি বলেন, যে দিন অনার্সের ফল প্রকাশ হয় সেদিন মুরাদ বাড়িতে ছিল। আমাকে নিজ হাতে মিষ্টি খাওয়ায় মুরাদ। আমার কাছে দোয়া চেয়ে বলেছিল, সে বিসিএস কর্মকর্তা হবে।

মুরাদ আহমেদের কলেজ শিক্ষক রুহুল আমীন বলেন, মুরাদ আমার খুব প্রিয় ছাত্র ছিল। টানা তিন বছর ওকে পড়িয়েছি। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ বন্ধ হয়নি। কয়েক দিন আগেও ফোন করে আমার খোঁজখবর নিয়েছেন। ওর মতো ভদ্র ও বিনয়ী ছাত্র পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে