শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬, ০৩:৫৮:১৫

পরীক্ষার আগেই নম্বর প্রস্তুত!

পরীক্ষার আগেই নম্বর প্রস্তুত!

আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ: রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চলা এইচএসসি পরীক্ষায় একটি কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের দুটি বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার ফলাফল পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই চূড়ান্ত নম্বরপত্র আকারে ওয়েবসাইটে জমা হয়েছে। এ ছাড়া আরও চারটি বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষার ফলাফল জমা হয়েছে, যেগুলোর নম্বর কেন্দ্র থেকে শিক্ষা বোর্ডে পাঠানোই হয়নি। বিষয়গুলোর মধ্যে গতকাল শুক্রবার হয় একটি পরীক্ষা। আজ শনিবার হওয়ার কথা আরেকটির। আর এর মধ্য দিয়ে সব বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হবে। এই কেন্দ্র হলো রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ। এ কলেজে রাজশাহী কলেজ ও রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গতকাল উচ্চতর গণিত প্রথম পত্রের ব্যবহারিক পরীক্ষা হচ্ছিল। অথচ আগের দিন বৃহস্পতিবার রাতেই এ পরীক্ষার ফলাফল শিক্ষা বোর্ডের সফটওয়্যারে জমা হয়েছে। এমনকি আজ অনুষ্ঠিতব্য পদার্থবিদ্যার পরীক্ষার নম্বরও একইভাবে আগেই জমা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কেন্দ্র থেকে পাঠানোর আগেই আরও চারটি বিষয়ের নম্বর জমা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো রসায়ন, জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও আইসিটি। পরীক্ষাকেন্দ্রের বিভাগীয় প্রধানেরা এ বিষয়ে লিখিতভাবে কেন্দ্রসচিবকে অবহিত করেন। সেটার অনুলিপি রাজশাহী জেলা প্রশাসক, শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রসচিব ও রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান এ বিষয়ে নগরের বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।


পরীক্ষাকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ কেন্দ্রে যেসব পরীক্ষার্থীর ব্যবহারিক পরীক্ষা রয়েছে, তাদের ‘এ’ থেকে ‘ইউ’ পর্যন্ত নয়টি দলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি দলে ৪০ জন করে শিক্ষার্থী। তাদের রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মনোবিজ্ঞান, কম্পিউটার, আইসিটি, উচ্চতর গণিত ও পদার্থবিদ্যার ব্যবহারিক পরীক্ষা রয়েছে। ১৫ জুন থেকে ব্যবহারিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আজ এসব পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা। নিয়মানুযায়ী, ব্যবহারিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে সরাসরি শিক্ষা বোর্ডের সফটওয়্যারে পাঠাতে হয়। এ জন্য একজন শিক্ষক দায়িত্বপ্রাপ্ত রয়েছেন। তিনি একটি পাসওয়ার্ডের সাহায্যে ওয়েবসাইটে ঢুকে এসব নম্বর যাচাই করে দেখতে পারেন।


গত বুধবার কেন্দ্র থেকে কম্পিউটার বিষয়ের দুজন শিক্ষার্থীর (মানোন্নয়ন) ও পরিসংখ্যান বিষয়ের ২২০ জন শিক্ষার্থীর নম্বর পাঠানো হয়েছে। তখনো অন্য চার বিষয়ে কোনো নম্বর বোর্ডে পাঠানো হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক নির্ধারিত পাসওয়ার্ড দিয়ে বোর্ডের ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখেন, অনুষ্ঠিত চারটি বিষয়ের নম্বর পাঠানো না হলেও তা ওয়েবসাইটে নম্বরপত্রে দেওয়া হয়ে গেছে। যে দুটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি, সেগুলোর নম্বরও দেওয়া হয়েছে। প্রতি শিক্ষার্থীকে ২৫-এর মধ্যে ২৫ দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি তখন মৌখিকভাবে কেন্দ্রসচিব ও কলেজ অধ্যক্ষকে জানান। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় আবার ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখেন সব বিষয়ের নম্বর আগের মতোই দেওয়া রয়েছে।


এ ব্যাপারে কেন্দ্রসচিব ও অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক পরীক্ষার নম্বর বোর্ডের সফটওয়্যারে ইনপুট দিতে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যান। পরীক্ষা শেষই হয়নি, এমন দুটি পরীক্ষার নম্বর ওই সফটওয়্যারে আগেই দেওয়া রয়েছে। তিনি আরও বলেন, মোট আট বিষয়ে ব্যবহারিক পরীক্ষা রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে শুধু আইসিটি ও মনোবিজ্ঞান বাদ দিয়ে সব বিষয়ের নম্বরই বোর্ডের ওয়েবসাইটে উঠে গেছে। বিভাগীয় শিক্ষকেরা তাঁকে বিষয়টি জানানোর পরে তিনি জিডি করেছেন। বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও জেলা প্রশাসকের কাছেও লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। জানতে চাইলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সামসুল কালাম আজাদ বলেন, কোনো একটা দুষ্টচক্র এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি কম্পিউটার শাখায় কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা প্রকৃত নম্বরই পাবে। কেন্দ্র থেকে তাঁর কাছে পরীক্ষকদের স্বাক্ষরিত নম্বরপত্রের হার্ড কপিও আসবে। রোববার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে বিষয়টি তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।-প্রথম আলো

২৫ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে