রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬, ১১:৫০:৫৫

অ্যাম্বুলেন্সে আদালতে গিয়ে সেই নির্মমতার বর্ণনা দিলেন তাসফিয়া

অ্যাম্বুলেন্সে আদালতে গিয়ে সেই নির্মমতার বর্ণনা দিলেন তাসফিয়া

রাজশাহী : এখনো সেই নির্মমতার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেননি।  হাত ও পায়ে রয়েছে তার প্লাস্টার। পাজরের ভাঙা হাড় সেরে ওঠেনি এখনো।  মাথার জখমও শুকায়নি পুরোপুরি।  

এ কোনো দুর্ঘটনা নয়, স্বামীর নির্মম নির্যাতনে শরীরে ক্ষত তৈরি হয়েছে রিফাহ তাসফিয়ার।  যৌতুকের দাবিতে গত ১১ জুলাই রাজশাহী মহানগরের ডিঙ্গাডোবা ব্যাংক কলোনি এলাকার শ্বশুরবাড়িতে স্বামী সামিউল হকের নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি।  রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চলছে তার চিকিৎসা।

রোববার সকালে চিকিৎসাধীন রিফাহকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নেয়া হয় মহানগর হাকিম আদালতে।  স্ট্রেচারে আদালতে গিয়ে বিচারকদের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে স্বামীর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন তিনি।

মহানগর হাকিম আদালত-১-এর বিচারক মোকসেদা আসগার তার খাস কামরায় দুপুর ১২টা ৫ মিনিট থেকে পৌনে ২টা পর্যন্ত রিফাহ তাসফিয়ার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

জবানবন্দি শেষে রিফাহর আইনজীবী জতিউল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, কেন মেয়েটির ওপর এ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে, কীভাবে হয়েছে এবং আর কারা জড়িত- সেসব বিষয়ে মেয়েটি তার জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন।

জতিউল ইসলাম জানান, তিনি তার ওকালতির জীবনে এমন নির্মম নির্যাতনের ঘটনা আর দেখেননি। যৌতুকের জন্য তাসফিয়ার স্বামী তার দুই হাত ও এক পা ভেঙে দিয়েছে।  বুকের ও পাঁজরের দুটি হাড়ও ফেটে গেছে।  মাথায় সেলায় লেগেছে ১৬টি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুবুর রহমান বলেন, আদালতের তলবে রিফাহ তাসফিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় এ জবানবন্দি দিলেন।  গত ১১ জুলাই থেকেই তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।  রোববার তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।

আদালতে তাসফিয়ার সঙ্গে তার মা হোসনে আরা পারভীন, চাচা মীর আবু সাঈদ ও মামা ফজলে রাব্বীসহ আরো কয়েকজন নিকটাত্মীয়রা এসেছিলেন।

তারা জানান, বছর দেড়েক আগে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার আবদুস সালামের মেয়ে রিফাহ তাসফিয়ার সঙ্গে নগরের ডিঙ্গাডোবা ব্যাংক কলোনি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে সামিউল হক ওরফে সোয়াদের বিয়ে হয়।  

তারা জানান, পরিবারের অমতে দু’জনে প্রেম করে বিয়ে করেন। রিফাহ তাসফিয়া মা-বাবার একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে তার পরিবার তাদের বিয়েটা মেনে নেয়।  এরপর থেকেই মেয়ে মায়ের কাছ টাকা নিয়ে আসত।  কিন্তু কোনোদিন মাকে জানায়নি যে স্বামীর নির্যাতনের কারণে সে মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসত।

কয়েকদিন আগে থেকে স্বামী তাকে বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দিচ্ছিল। এরই জের ধরে গত ১১ জুলাই দুপুরে তাসফিয়াকে নির্যাতন করা হয়।  এ ঘটনায় রিফাহর মা হোসনে আরা পারভীন বাদী হয়ে সামিউল ও মা-বাবা এবং দুই ভাইকে আসামি করে রাজপাড়া থানায় মামলা করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরের দিন সামিউলকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।  মামলার অন্য আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন।
২৪ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে