নুসরাত জাহান মিথিলা : গ্রেনেড হামলায় আমার বাবা লিটু মুন্সী যখন মারা যান, তখন আমার বয়স মাত্র ৯ মাস। সেই মুহূর্তে বাবার অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মনে জ্বালা না ধরালেও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারি বাবার অভাব। তার অনুপস্থিতি অনুভব করি প্রতিক্ষণ।
আমি মাদারীপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৫সহ সমাপনী শেষ করে ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি। আমার ইচ্ছা, ব্যারিস্টার হবো।
এরপর বাবার খুনিদের বিচারের মুখোমুখি করে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাব। কিন্তু সেটা কীভাবে সম্ভব- তাই এখন প্রশ্ন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট আমাকে ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দিয়েছেন। তা ফিক্সড ডিপোজিট করে ব্যাংকে রাখা হয়েছে। প্রতি মাসে যে ৩ হাজার টাকা শিক্ষা খরচ পাই; তা বর্তমান অবস্থায় খুবই কম।
আমাদের জন্য আবাসনের কথা বলা হয়েছে; তারও কোনো খবর নেই। আমি তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে এত কিছু চাই না।
বাবা বেঁচে থাকলে তিনিই আমার জন্য সব করতেন। সহপাঠীদের বাবা আছে; তারা তাদের সন্তানদের কত আদর করেন। তখন আমার খুব খারাপ লাগে।
ঢাকায় আবাসনের ব্যবস্থা করলেই আমি ঢাকায় ভালো স্কুলে পড়তে পারব। আর ব্যারিস্টার হয়ে বাবার খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে পারব।
বাবার বাড়ি আছে, তবু আমি মায়ের সঙ্গে মাদারীপুর শহরের পৌরসভা ভবনের পাশে নানাবাড়িতে থাকি। দাদা-দাদির একমাত্র ছেলে ছিলেন আমার বাবা।
দাদা-দাদি আমাকে নানাবাড়িতে রেখে অনেক কষ্টে সময় কাটান। তবু তারা আমার ভালো চান। তাদেরও ইচ্ছা আমি ব্যারিস্টার হই।
দাদা আইউব আলী মুন্সী ও দাদি ফিরোজা বেগমসহ অন্যদের কাছে শুনেছি; বাবা ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীতে ঢাকায় যান।
পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মারা যান। যেদিন বাবা মারা যান, সেদিন ঢাকা থেকে এক লোক ফোন করে বলেন, 'একজন লোক গ্রেনেড হামলায় মারা গেছে। তার পকেটে এই ফোন নম্বর পাওয়া গেছে।
আপনাদের যদি কোনো আত্মীয় হয়, তাহলে ঢাকায় আসেন।' এরপর আমার মামা বর্তমানে আয়ারল্যান্ডপ্রবাসী জুয়েল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে বাবার লাশ শনাক্ত করেন। সেই থেকে এখনও প্রতি বছর বাবার কবরে ফুল দিতে নেতাকর্মীরা আসে।
তখনকার রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আমার পরিবারের কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি। তবে এখন কথা বলার সুযোগ হয়েছে।
তাই বলছি, আমি বাবা হত্যার বিচার চাই। যারা তাকে হত্যা করেছে, তাদের যেন বিচার করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
লেখক : নুসরাত জাহান মিথিলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুরের যুবলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী লিটু মুন্সীর মেয়ে। -সমকাল
২১ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম