শরীয়তপুর : শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নে এক মৃত ব্যক্তির নামেও তোলা হচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল। ডিলার ও স্থানীয় মেম্বারের যোগসাজশে মৃত ব্যক্তি, প্রবাসী ও সরকারি চাকরিজীবীর নাম তালিকাভুক্ত করে চাল লুটপাট করার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এর ফলে এলাকার বঞ্চিত হতদরিদ্রদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
আংগারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১ হাজার ৩৪৪ জন হতদরিদ্রকে তালিকাভুক্ত করা হয়। তাদের প্রতি মাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু তালিকায় হত দরিদ্রদের পরিবর্তে মৃত ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রবাসী, সরকারি চাকুরিজীবী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম রয়েছে।
সরজমিনে আংগারিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩১১ নম্বর তালিকাভুক্ত শাহাজালাল খনকারের (৬৫)বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বিধবা স্ত্রী রহিমা বেগম একটি খুপড়ি ঘরে বাস করেন। তার দুই ছেলে ঢাকায় কাজ করেন এবং দুই মেয়ে তাদের স্বামীর বাড়িতে থাকে। রহিমা বেগমের স্বামী শাহজালাল খনকার ৫ বছর আগে মারা গিয়েছেন। তালিকায় তার স্বামীর নাম কিভাবে গেল তিনি তা জানেন না। তিনি কোনও কার্ড পাননি।
স্থানীয় খায়েরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাজমা আক্তার (কার্ড নম্বর ১২৭১), কুয়েত প্রবাসী জাহাঙ্গীর তালুকদারের স্ত্রী শাহিনুর বেগম (কার্ড নম্বর ১২১৬), বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী আতাউর রহমানের স্ত্রী সাজেদা বেগমসহ (কার্ড নম্বর ১২৫৮) অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তির নাম রয়েছে হতদরিদ্রের তালিকায়। এদের অনেকেই চাল উত্তোলন করেননি কিন্তু ডিলারের মাস্টার রোলে চাল বিতরণ দেখানো হয়েছে।
মৃত শাহজালাল খনকারের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, ‘আমার মৃত স্বামীর নাম দিয়ে কে বা কারা চাল উত্তোলন করেছে তা আমার জানা নেই। আমি কোনও কার্ড পাইনি, চালও উত্তোলন করিনি।’
তালিকায় নাম থাকা সাজেদা বেগম বলেন, ‘তালিকায় আমার নাম আছে শুনেছি। কিন্তু আমি কোনও চাল উত্তোলন করিনি।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিলার মফিজুর রহমান স্থানীয় ইউপি সদস্যের সঙ্গে যোগসাজস করে নামে বেনামে চাল লুটপাট করছে। স্থানীয় জব্বার তালুকদার, দেলোয়ার তালুকদার, আবুল কাশেম, সলেমন শিকদার ও ফরহাদ খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার দরিদ্র মানুষের উপকারের জন্য ১০ টাকা দরে চাল দিচ্ছে। হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে মৃত ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নামে যারা এ চাল লুটপাট করছে তাদের বিচার হওয়া উচিত।’
আংগারিয়া ইউনিয়নের ডিলার মফিজুর রহমান বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী আমি চাল দিয়েছি। তালিকায় ভুল থাকলে আমার কী করার আছে।’
এ সময় মৃত ব্যক্তিকে কীভাবে চাল দিলেন? জানতে চাইলে তিনি কোনও উত্তর দিতে পারেননি।
স্থানীয় ৯ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আকিবার খান বলেন, ‘তালিকায় কিছু ভুলত্রুটি হয়েছে। এগুলো সংশোধন করা হবে।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়ে অবহিত হয়েছি। যারা এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
১৭ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম