শরীয়তপুর থেকে : মেয়েটির নাম সুমাইয়া আক্তার সুরাইয়া (১৮)। বাবা সলেমান মীর, মা জলেফা বেগম (ফাতেমা)। গতকাল শুক্রবার বাবা-মা ও পরিবার-পরিজনের খোঁজে শরীয়তপুরে আসে সুরাইয়া।
হয়তো ওর বাবা-মা পরিবার-পরিজন সবই আছে। তারাও হয়তো ওকে খুঁজছে। তবে তাদের কাছে ওর সন্ধান নেই। আর পরিবার-পরিজনের কোনো ঠিকানা ওর কাছে নেই।
মা-বাবার নাম বলতে পারলেও বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতেই তার চোখে মুখে যেন আঁধার নেমে আসে। বাবা-মা কোথায় কিংবা তাদের ঠিকানা সম্পর্কে কিছুই বলতে পারে না সুরাইয়া। বর্তমানে তাকে শরীয়তপুর সদর পালং মডেল থানায় নিরাপদ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
পালং মডেল থানা পুলিশের ওসির কক্ষে বসে শনিবার দুপুরে কথা হয় সুরাইয়ার সঙ্গে। সুরাইয়া বলেন, ২০০৬ সালে ঢাকার মিরপুর-১ এ বেড়াতে গিয়ে হারিয়ে যাই। তখন আমার বয়স ছয় বছর। পরে বাবা-মাকে খুঁজে না পেয়ে ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চে উঠি। লঞ্চে বরিশালের মুলাদী লঞ্চঘাটে নামি।
ওখানে নামলে মুলাদীর হারুন খান নামে এক আংকেল আমাকে বাসায় নিয়ে যায়। হারুন আংকেলের বাড়িতে আট মাস থাকি। পরে হারুন আংকেল বরিশালের হিজলা থানার ভূয়াবাড়িয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পানিভাঙা গ্রামের কামরুল উদ্দিন হাজারীর ছেলে দেলোয়ার হোসেন বাদশা হাজারীর কাছে কাজের মেয়ে হিসেবে আমাকে তুলে দেয়।
এত বছর আমি দেলোয়ার হোসেন বাদশা হাজারীর বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করেছি। তবে ওই বাড়ি থেকে অনেক বার পালাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু পালাতে পারিনি।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই বাসার থেকে পালিয়ে আসি। শুক্রবার লঞ্চে শরীয়তপুরে চলে আসি। আমি ছোটকালে মা-বাবার কাছে শুনেছি আমাদের বাড়ি শরীয়তপুরে। তাই মা-বাবার খোঁজে পালিয়ে এখানে এসেছি। গত ১২ বছর ধরে আমি আমার মা-বাবাকে খুঁজছি।
পালং মডেল থানা পুলিশের ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর জানান, মেয়েটি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আমাদের থানায় আসে। তাকে জিজ্ঞাসার পর জানতে পারি, তার বাড়ি শরীয়তপুর হতে পারে। তার মা-বাবার খোঁজে আমরা কাজ করছি। আপাতত মেয়েটি থানায় হেফাজতে আছে। এ ব্যাপারে থানায় একটি জিডি হয়েছে।
এমটিনিউজ/এসএস