শরীয়তপুর থেকে : করোনা ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হলে মনোবল শ'ক্ত রাখতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে বলে জানিয়েছেন করোনাজয়ী সাংবাদিক আশিকুর রহমান রাজু। তিনি ইনডিপেনডেন্ট টিভির ঢাকা কার্যালয়ের ভিডিওগ্রাফার। করোনা ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হয়ে ১৬ দিন হাসপাতালে ছিলেন।
সুস্থ হয়ে এখন ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে; বর্তমানে শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডামুড্যা গ্রামের নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি। করোনা ভাইরাসে আক্রা'ন্ত হওয়া, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার অভিজ্ঞতার কথা মুঠোফোনে জানান আশিকুর রহমান রাজু।
তিনি বলেন, ২৬ মার্চ পর্যন্ত করোনা সংক্রা'ন্ত সংবাদ সংগ্রহের জন্য হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গেছি। ২৬ মার্চ রাতে তেজগাঁওয়ের কার্যালয় থেকে যাত্রাবাড়ীর বাসায় যাওয়ার পর প্রথম জ্বর অনুভব হয়। রাতেই জ্বর অনেক বেশি ছিল। ২৭ মার্চ মাথাব্যথা বেড়ে যায়। এরপর আইইডিসিআরে ফোন করি। তাদের পরামর্শে বাসায় অবস্থান করে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। জ্বর ও কাশি বেড়ে গেলে ৩০ মার্চ আবার আইইডিসিআরে ফোন করি। ১ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহের জন্য আইইডিসিআরের লোক আসেন বাসায়। তারা নমুনা সংগ্রহ করেন।
আশিকুর রহমান রাজু বলেন, আইইডিসিআরের লোকজন বাসায় আসায় ঝামে'লায় পড়তে হয়েছিল। মহল্লার মানুষ ও বাড়ির মালিক খুব ঝামে'লা শুরু করেন। কেন আইইডিসিআর থেকে লোক এসেছে বাসায়। আমি কেন হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় আছি। ২ এপ্রিল আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়, আমার করোনা পজিটিভ। পরীক্ষার ফল জানার পর আমি খুব ঘা'বড়ে যাই। সেদিনই কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হই।
আশিকুর বলেন, এত কিছুর মাঝেও মনোবল হা'রাইনি। ওষুধ সেবনের পাশাপাশি নিজ থেকে গরম পানি পান করতাম, গরম পানির ভাপ নিতাম। গার্গল করতাম। এমনকি হালকা ব্যায়ামও করেছি। এরপর চিকিৎসা সেবায় ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকি। ১২ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। পরের দিন ১৩ এপ্রিল জানতে পারি, ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। মনে সা'হস বেড়ে যায়। ১৬ এপ্রিল আবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। ১৮ এপ্রিল জানানো হয় আমার শরীরে করোনা ভাইরাস নেই। সেদিনই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে ডামুড্যার গ্রামের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছি।
কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে ১৬ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন এই সাংবাদিক। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, সবার কাছে অনুরোধ হাসপাতালে না গিয়ে ঘরে আইসোলেশনে থাকুন। আক্রা'ন্ত হলে জ্বর-সর্দির ওষুধ সেবন করুন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ঘরে থেকেই করোনা জয় করুন। কারণ ঘরে বসেই করোনা জয় সম্ভব।
তিনি বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কখনও কখনও দুশ্চি'ন্তা ভর করতো। আমাকে যে কক্ষে রাখা হয়েছিল, সেখানে বয়স্ক এক ভদ্রলোক ছিলেন। তিনি হৃ'দরো'গ, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রা'ন্ত ছিলেন। তার অবস্থা খুব খা'রাপ ছিল, সারাক্ষণ য'ন্ত্র'ণায় কা'তরাতেন। ওই অবস্থা দেখে পাঁচ রাত আমি ঘুমাতে পারিনি। সবসময় দু'শ্চি'ন্তায় থাকতাম।